২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৫৮, চলতি বছরে মৃত্যু ১৩০

ফাইল ছবি
দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৮ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে এ সময়ে কারো মৃত্যু হয়নি। ফলে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ১৩০ জনেই স্থিত রয়েছে।
শুক্রবার (০৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল ভর্তি রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৪৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯ জন, ঢাকা বিভাগে ৩০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৬ জন, খুলনা বিভাগে ৭ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ১১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিম্নরূপ: জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন ভর্তি, ১০ জন মৃত্যু; ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন ভর্তি, ৩ জন মৃত্যু; মার্চে ৩৩৬ জন ভর্তি, মৃত্যু নেই; এপ্রিল ৭০১ জন ভর্তি, ৭ জন মৃত্যু; মে মাসে ১,৭৭৩ জন ভর্তি, ৩ জন মৃত্যু; জুনে ৫,৯৫১ জন ভর্তি, ১৯ জন মৃত্যু; জুলাইয়ে ১০,৬৮৪ জন ভর্তি, ৪১ জন মৃত্যু; আগস্টে ১০,৪৯৬ জন ভর্তি, ৩৯ জন মৃত্যু; এবং সেপ্টেম্বরে এখন পর্যন্ত ১,৯৯১ জন ভর্তি, ৮ জন মৃত্যু হয়েছে।
মোট মিলিয়ে, চলতি বছরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩,৪৬৭ জন, আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩০ জনে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৩, হাসপাতালে ভর্তি ৪৭৩
বাংলাদেশে এক বছরে সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ২০২৩ সালে, যা ৩,২১,১৭৯ জন। ২০২৪ সালে ভর্তি হয়েছিল ১,০১,২১১ জন, ২০২২ সালে ৬২,৩৮২ জন, ২০২১ সালে ২৮,৪২৯ জন, ২০২০ সালে ১,৪০৫ জন এবং ২০১৯ সালে ১,০১,৩৫৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের ওঠা-নামা বিশেষ করে বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। দ্রুত জনসংখ্যা বেশি এলাকা, খোলা জলাশয় এবং মশা নিয়ন্ত্রণে দেরি, এই রোগের বিস্তার বাড়ানোর প্রধান কারণ।
ডেঙ্গু একটি ভাইরাল জ্বর, যা এডিস এলবোপিক্টাস ও এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড় থেকে ছড়ায়। মশাগুলো দিনে ও রাতে উভয় সময়ে কামড়াতে পারে, সাধারণত জনবসতিপ্রধান এলাকায় থাকে। বিশ্বব্যাপী বছরে প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন মানুষ সংক্রমিত হয়, যার মধ্যে ৯৬ মিলিয়ন ক্লিনিক্যালভাবে শনাক্ত হয়।
ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ হলো আকস্মিক উচ্চমাত্রার জ্বর, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা, পেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, বমি, ক্লান্তি এবং গায়ের লালচে ফুসকুড়ি। গুরুতর ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা রক্তপাত হতে পারে।
রক্তপরীক্ষা (প্ল্যাটিলেট, হেমাটোক্রিট) এবং ভাইরাস শনাক্তকরণ করে ডেঙ্গু নির্ণয় করা হয়। ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল নেই; তাই সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে তাপ নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং তরল গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
ডিহাইড্রেশন বা প্লেটলেটের কমি দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি প্রয়োজন হতে পারে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘরে পানি জমতে দেবেন না, বিশেষ করে ফুলের টব, টায়ার ও অন্যান্য খোলা পাত্রে। পরিধেয় পোশাক যেন শরীর ঢেকে রাখে। মশারি ও রিপেল্যান্ট ব্যবহার করা উচিৎ।
সরকারি উদ্যোগে মশা নিয়ন্ত্রণ, গণসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বর্ষাকালে প্যাথোজেন নিরীক্ষা ও উলবাকিয়া পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা জরুরি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি