চট্টগ্রামে তিনজনের করোনা শনাক্ত

ফাইল ছবি
রাজধানী ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামেও নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। দীর্ঘ এক বিরতির পর চট্টগ্রামে আবারও কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন করে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি জানান, আজ সকালে নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তার আগে গত সপ্তাহে মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি থাকা আরও দুজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এই তিনজনই ২০২৫ সালে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হওয়া কোভিড রোগী।
সিভিল সার্জন বলেন, আমরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সংক্রমণ যেন আর না বাড়ে, সে জন্য জনগণকে মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইসোলেশন ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামে সরকারি আরটি-পিসিআর ল্যাবে বর্তমানে শনাক্তকরণ কিটের ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি সূত্র। সরকারি পর্যায়ে কিট না থাকায় আপাতত শুধু বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেই করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন কিট এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চোখ রাঙাচ্ছে করোনা, শনাক্ত ১৩
ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও হাসপাতালের প্রস্তুতির বিষয়েও অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই, তাই এখন থেকেই সম্ভাব্য আইসোলেশন ইউনিট চিহ্নিত করা এবং হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গত ২৩ মে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোভিড-১৯-এর নতুন ধরন NB.1.8.1 বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু দেশে দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ইতোমধ্যেই এই ধরনটির সংক্রমণ বেড়েছে। একই ধরন বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরামর্শ দিয়েছে, ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে। দেশের সব স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও স্ক্যানিং কার্যক্রম বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন সংক্রমণ না থাকলেও ভাইরাসের অস্তিত্ব পুরোপুরি মুছে যায়নি। নতুন ধরনগুলো অনেক সময় উপসর্গহীন থেকে ছড়াতে পারে, যা আরও বিপজ্জনক।
তিনি আরও বলেন, জনসাধারণের মধ্যে আত্মতুষ্টি এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা থাকলে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যেতে পারে।
করোনাভাইরাস এখন আর শুধু অতীতের একটি স্মৃতি নয়। নতুন করে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামনে এনে দিয়েছে এক জরুরি বার্তা—নির্বিকার থাকা নয়, বরং স্বাস্থ্যবিধি মানা ও প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলাই একমাত্র পথ।
সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে লকডাউন বা কড়াকড়ি ঘোষণা না দেওয়া হলেও, জনস্বার্থে ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং প্রস্তুতির ওপরই এখন জোর দেওয়া হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি