চোখ রাঙাচ্ছে করোনা, শনাক্ত ১৩

ফাইল ছবি
দেশে আবারও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ১৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
আক্রান্তদের সবাই রাজধানী ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা। যদিও এই সময়ের মধ্যে কেউ মারা যাননি, তবে পুনরায় সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দেশের মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০ জনে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ জন, ফলে এ পর্যন্ত মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৮ জনে। মৃতের সংখ্যা অপরিবর্তিত থেকে গেছে ২৯ হাজার ৫০০ জনে।
বিগত কয়েক সপ্তাহ তুলনায় দেশে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী থাকলেও গত দুই দিনে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
সোমবার (৯ জুন) ৪১টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ জন শনাক্ত হলেও মঙ্গলবার (১০ জুন) তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ জনে, যার পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ১০১টি।
এতে সর্বশেষ শনাক্তের হার দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা দেশে মহামারি শুরু থেকে এ পর্যন্ত গড় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশের কাছাকাছি।
এ সংকেত শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিবেশী ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে নতুন করে করোনার সাব-ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় আশঙ্কা বাড়ছে বাংলাদেশেও। বিশেষ করে অমিক্রনের নতুন উপধরনের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ায় বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন নির্দেশনা জারি
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। ফলে সীমান্তবর্তী এলাকা এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে রোগতত্ত্বীয় নজরদারি ও থার্মাল স্ক্যানিং জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
করোনার এই পুনরুত্থানের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে নতুন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ৫ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সোমবার রাতে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান এক ফেসবুক পোস্টে জানান, করোনা প্রতিরোধে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারি করা নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মানতে হবে।
নির্দেশনাগুলো হলো:
১. নিয়মিতভাবে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া।
২. জনসমাগমস্থলে এবং ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার।
৩. আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্তত ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা।
৪. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা।
৫. হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুই ব্যবহার করে মুখ ঢেকে নেওয়া।
এছাড়া দেশে আগত যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানার ও ডিজিটাল থার্মোমিটারের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস) সংরক্ষণের দিকেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নাগরিকদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ভারত ও অন্যান্য সংক্রমিত দেশগুলোতে ভ্রমণ না করার জন্য। একই সঙ্গে করোনা লক্ষণ দেখা দিলে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান ও অসুস্থতা বাড়লে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ প্রয়োজনে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর হটলাইন (০১৪০১-১৯৬ ২৯৩)-এ যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
করোনার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ এবং প্রথম মৃত্যু ঘটে ১৮ মার্চ। ২০২১ সালের আগস্ট ছিল সংক্রমণের সর্বোচ্চ দিকচিহ্ন, যখন মাত্র দুদিনে—৫ ও ১০ আগস্ট—দুদিনেই ২৬৪ জন করে মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো তাজা। যদিও বর্তমানে করোনাভাইরাসের উপসর্গ তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলোর আচরণ এখনো সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায়নি। ফলে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তাবিধি মেনে চলা এখন আগের মতোই জরুরি।
সরকারিভাবে এখনই কোনো লকডাউন বা জরুরি সতর্কতা ঘোষণা না করা হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন—করোনাকে এখনো হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। নাগরিক সচেতনতা, সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং প্রশাসনিক সতর্কতা সম্মিলিতভাবে থাকলেই কেবল সম্ভব হবে আবারও করোনা ঢেউকে সামাল দেওয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ে মাস্ক ব্যবহার এবং ভিড় এড়িয়ে চলার অনুশীলনেই লুকিয়ে রয়েছে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি