শাশুড়ির ভাড়া করা কিলারের হাতে সালমান শাহর মৃত্যু
ফাইল ছবি
বাংলা চলচ্চিত্রের নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবার নতুন করে দায়ের হয়েছে হত্যা মামলা। প্রায় তিন দশক ধরে অপমৃত্যু হিসেবে বিবেচিত এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকার আদালতের সাম্প্রতিক রায়ে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—সালমান শাহ আত্মহত্যা করেননি, বরং তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হকের আদালত রায়ে বলেন, ১৯৯৭ সালে সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার রিভিশন আবেদনের শুনানিতে আসামি রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উপেক্ষা করার কোনো আইনগত সুযোগ নেই।
রেজভী তার জবানবন্দিতে সালমান শাহকে হত্যার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন, যা আদালতের পর্যবেক্ষণে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
রেজভীর জবানবন্দি অনুযায়ী, সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা হক ও তার মা লতিফা হক লুসি ছিলেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। রাজধানীর গুলিস্তানের একটি বারে বসে পরিকল্পনা করা হয় সালমানকে হত্যার। এতে অংশ নেন চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। চুক্তি হয় ১২ লাখ টাকায়।
জবানবন্দিতে আরও উঠে আসে, সালমানের স্ত্রী সামিরা ও ডনের মধ্যে গোপন সম্পর্ক ছিল। অন্যদিকে সামিরার মায়ের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এসব সম্পর্কের জটিলতা থেকেই সালমান শাহকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা, স্ত্রী সামিরাসহ আসামি ১১
রেজভীর জবানবন্দি অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটার দিকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সালমান শাহের বাসায় প্রবেশ করে অভিযুক্তরা। সালমানকে ক্লোরোফর্ম প্রয়োগ করে অচেতন করা হয়। এরপর ইনজেকশন পুশ করে তাকে নিস্তেজ করা হয়। পরে সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার ছদ্মবেশ দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
আদালতের নির্দেশে রমনা থানায় নতুন করে হত্যা মামলা দায়ের করেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম। মামলায় ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সামিরা হক, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ডন, রুবী, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, ছাত্তার, সাজু ও রেজভী আহমেদ।
আদালত মামলাটি তদন্ত করে আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বলেন, ২৯ বছর ধরে যারা মামলাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত।
আইনজীবী আবিদ হাসান বলেন, রেজভীর জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের সব বিবরণ রয়েছে। এতদিনে এই মামলা না হওয়াটা ছিল বিচার ব্যবস্থার ব্যর্থতা। আমরা দ্রুত বিচার দাবি করছি।
সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের রহস্য এবার নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হওয়া এই হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া কী মোড় নেয়, তা এখন সময়ই বলে দেবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








