রাবিতে পোষ্য কোটা স্থগিত, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত

ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। তারা উপাচার্যের নির্বাহী ক্ষমতাবলে কোটাটি বাতিল ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে সহউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে শিক্ষার্থীরা তার গাড়ি আটকে দেন। পরে তিনি হেঁটে বাসভবনের দিকে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তার বাসভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে তিনি প্রক্টর মাহবুবর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে জুবেরী ভবনের দিকে যান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে সহউপাচার্য মাঈন উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে আটকে রাখেন।
এ সময় শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন।
শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সহউপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি আবদুল আলিম সংবাদ সম্মেলন করেন। সিনেট ভবনের সামনে তিনি জানান, রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মবিরতিতে যাবেন।
এরপর রাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবন ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডসংলগ্ন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীবের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। নারী শিক্ষার্থীরাও প্রতিটি হল থেকে নেমে এসে আন্দোলনে অংশ নেন।
সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ‘পোষ্য কোটা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, পোষ্য কোটা নো মোর’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং সাবেক সমন্বয়ক ও রাকসুর বিভিন্ন পদের প্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত ইস্যু। এটিকে সামনে এনে রাকসু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আগেই পোষ্য কোটার কবর রচনা করেছি। নতুন করে পোষ্য কোটাতে ফিরতে দেব না। কোটার বাতিল নিশ্চিত করেই ফিরব।
আরও পড়ুন: রাকসু নির্বাচনে ভোট গণনা হবে ওএমআর পদ্ধতিতে
শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রশাসনের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতিতে রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে।
এর আগে, বিকেল থেকে টানা আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার ঘোষণা দেয়।
রাত দেড়টার পরও শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
তারা জানান, স্থগিত নয়, উপাচার্যের নির্বাহী ক্ষমতাবলে কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা খুবই ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি। কিন্তু এভাবে জিম্মি করে আটকে রেখে সিদ্ধান্ত হতে পারে না। আজকে তারা যা করল, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, রাকসু নির্বাচন হবে কি না, সেটা শিক্ষার্থীদের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। তবে আমি রাকসু নির্বাচন নিয়ে খুবই সিরিয়াস।
চলতি বছরের ২ জানুয়ারি উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এর পর থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোটাটিকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে আন্দোলন শুরু করেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে তারা ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির হুমকি দেন।
এরই প্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক জরুরি একাডেমিক কমিটির সভা করে এবং ১০ শর্তে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করে, শুক্রবার জুমার নামাজের পরও আন্দোলন চালায় এবং কয়েকজন আমরণ অনশনেও বসেন। শনিবার দুপুর আড়াইটায় তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ার পোড়ান এবং বিকাল থেকে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন।
রাত গভীর হলেও শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দেন—পোষ্য কোটার স্থগিত নয়, স্থায়ী বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি