জাকসু নির্বাচনে ভিপি জিতু, জিএস মাজহারুল

আব্দুর রশিদ জিতু (বাঁয়ে) ও মাজহারুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচনের ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন।
নানা নাটকীয়তা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে সিনেট কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
ফল ঘোষণার আগে প্রয়াত এক শিক্ষকের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ফল ঘোষণা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম।
নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত ফলাফলের অনুসারে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু, এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মাজহারুল ইসলাম জয়ী হয়েছেন।
ফল ঘোষণা অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল ৫টার পর। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম। আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান, ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পরে।
নির্বাচনটি প্রায় ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। ভোট গণনা শুরু হয় রাত সোয়া ১০টায়। ভোট ম্যানুয়ালি গণনা করা হয়, যার কারণে ফল ঘোষণায় বিলম্ব হয়।
মোট ভোটার সংখ্যা ১১,৮৯৭, যার মধ্যে ছাত্র ৬,১১৫ এবং ছাত্রী ৫,৭২৮। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ১৭৭ জন, কেন্দ্রীয় ২৫টি পদের জন্য। ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রায় ৬৮ শতাংশ।
এবারের নির্বাচনে ছাত্রদলসহ চারটি প্যানেল এবং পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়কট ঘোষণা করে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভাব এবং নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে একজন নির্বাচন কমিশনারসহ বিএনপিপন্থি চারজন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন।
ভোট গণনার শেষে দেখা যায়, ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও পরবর্তীতে ‘জুলাই আন্দোলন সমন্বয়ক’, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের আরিফ উল্লাহ।
জিএস পদে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বাগছাসের আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম।
আরও পড়ুন: জাকসু ভোটে অনিয়মের অভিযোগে আরেক নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ
জাকসুর সুপার ফোর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন:
- ভিপি: আব্দুর রশিদ জিতু (স্বতন্ত্র)
- জিএস: মাজহারুল ইসলাম (শিবির)
- সহ-সাধারণ সম্পাদক (ছাত্র): ফেরদৌস আল হাসান (শিবির)
- সহ-সাধারণ সম্পাদক (ছাত্রী): আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা (শিবির)
অন্যান্য পদে ফলাফল
মোট ২৫টি কেন্দ্রীয় পদে, ভিপি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা জয় লাভ করেননি। বাকি ২১টি পদে শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা বড় জয় অর্জন করেছে।
নির্বাচিত অন্যান্য কেন্দ্রীয় পদধারীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক: আবু উবায়দা উসামা (শিবির)
- পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক: মো. শাফায়েত মীর (শিবির)
- সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক: মো. জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি (শিবির)
- সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মহিবুল্লাহ শেখ জিসান (স্বতন্ত্র)
- সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মো: রায়হান উদ্দীন (শিবির)
- নাট্য সম্পাদক: মো রুহুল ইসলাম (শিবির)
- ক্রীড়া সম্পাদক: মাহমুদুল হাসান কিরন (স্বতন্ত্র)
- সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী): ফারহানা আক্তার লুবনা (শিবির)
- সহ-ক্রীড়া (ছাত্র): মহাদী হাসান (শিবির)
- তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক: মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন (শিবির)
- সমাজসেবা সম্পাদক: আহসাব লাবিব (বাগছাস)
- সহ-সমাজসেবা সম্পাদক (ছাত্রী): নিগার সুলতানা (শিবির)
- সহ-সমাজসেবা সম্পাদক (ছাত্র): মো. তৌহিদ হাসান (শিবির)
- স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পাদক: হুসনী মোবারক (শিবির)
- পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক: মো. তানভীর রহমান (শিবির)
কার্যকরী সদস্য:
- পুরুষ: মো. তরিকুল ইসলাম, মো. আবু তালহা (শিবির), মোহাম্মদ আলী চিশতী (বাগছাস)
- নারী: নাবিলা বিনতে হারুণ, ফাবলিহা জাহান, নুসরাত জাহান ইমা (শিবির)
আব্দুর রশিদ জিতুর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
নির্দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বর্তমানে জাবিতে ‘গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক। কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের হাতে আহত হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। পরে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ‘গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ নামে প্ল্যাটফর্মের সূচনা করেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি