জাকসু ভোটে অনিয়মের অভিযোগে আরেক নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ

অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে অনিয়ম, অস্বচ্ছতা ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা। এতে সমগ্র নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট মহলে গভীর সংকট ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ২টার দিকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।
তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও এখনও চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করতে না পারা, অভিযোগ আমলে না নেওয়া এবং কমিশনের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার অভাব তার পদত্যাগের অন্যতম কারণ।
এর আগে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের নিচে সংবাদ সম্মেলন করে কমিশনের আরেক সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার পদত্যাগ করেন।
তিনি জানান, নির্বাচনে সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। সিদ্ধান্ত ছিল মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনার, কিন্তু তা না করে ম্যানুয়ালি গণনা করা হয়েছে, যা একটি বড় অনিয়ম।
তিনি আরও বলেন, আমি অনেক অনিয়ম ও গুরুতর ত্রুটি প্রত্যক্ষ করেছি, যা পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। লিখিতভাবে কমিশনকে জানালেও প্রতিকার হয়নি। বরং আমাকে পদত্যাগ না করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আরও পড়ুন: জাকসু নির্বাচনের ফল শনিবার সন্ধ্যায় ঘোষণার আশা নির্বাচন কমিশনের
অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার স্পষ্ট করে জানান, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন, তবে একটি আদর্শে বিশ্বাসী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার মতামতের সুরাহা না করেই ভোট গণনা শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়।
তিনি অভিযোগ করেন, আমি বারবার নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি অভিযোগ ও সমস্যাগুলো যাচাই করে আপাতত ভোট গণনা স্থগিত রাখতে। কিন্তু কমিশন আমার প্রস্তাব মানেনি। এমনকি যখন আমি নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম, ফিরে এসে দেখি ভোট গণনা শুরু হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, আমি চাপের মুখে পদত্যাগ করিনি। বরং আমাকে বিভিন্নভাবে বোঝানো হয়েছে যেন আমি পদত্যাগ না করি এবং সবকিছু মেনে নিই। কিন্তু আমি কখনো কাউকে ভয় করিনি, এখনো করব না। আমার কাছে যেটা সঠিক মনে হয়েছে, সেটাই করেছি। আমি কোনো দায় নেব না।
অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধার পদত্যাগ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
তারা বলছেন, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার দুই দিন পরও ফলাফল না আসা এবং নির্বাচন কমিশনের ভেতরে বিভক্তি প্রমাণ করে যে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়নি।
সব মিলিয়ে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচন বর্তমানে গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের দুজন সদস্যের পদত্যাগ এবং চূড়ান্ত ফলাফল বিলম্বিত হওয়া পুরো প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতাকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি