News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২২ অক্টোবর ২০২৫

বেসরকারি খাতেও ন্যায্য বেতন কাঠামো চায় এফবিসিসিআই

বেসরকারি খাতেও ন্যায্য বেতন কাঠামো চায় এফবিসিসিআই

ফাইল ছবি

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর অংশ হিসেবে গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন ইতোমধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংগঠন ও সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। এবার বেতন কাঠামো প্রণয়নের আলোচনায় বেসরকারি খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। 

সংগঠনটির মহাসচিব মো. আলমগীর জানিয়েছেন, বেসরকারি খাতের জন্যও একটি বাস্তবসম্মত ও মানবিক বেতন কাঠামো নির্ধারণের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে তারা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনায় গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নে কাজ শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে কমিশন বিভিন্ন সরকারি সংগঠন ও সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেছে, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত, প্রস্তাবনা ও উদ্বেগ তুলে ধরেছেন।

এই প্রক্রিয়ায় এবার বেসরকারি খাতকেও আলোচনার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই মহাসচিব মো. আলমগীর বলেন, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও কর্মসংস্থানের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকারি-বেসরকারি দুই খাতেই ন্যায্য বেতন কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।

এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এফবিসিসিআই বর্তমানে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা তৈরি করছে, যা খুব শিগগিরই জাতীয় বেতন কমিশনে জমা দেওয়া হবে। 

তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে বেতন সুবিধা মালিক ও শ্রমিকের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। তবে বাস্তবতায় একজন কর্মজীবীর পরিবারের চার সদস্যের মৌলিক জীবনযাত্রার নিশ্চয়তা দিতে হলে ন্যূনতম বেতন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হবে: শওকত আজিজ রাসেল

এফবিসিসিআই মহাসচিব আরও বলেন, প্রাইভেট সেক্টর সবসময় কম খরচে বেশি উৎপাদন চায়, তবে এর মধ্যেও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ন্যূনতম জীবনের নিশ্চয়তা দেওয়া জরুরি।

তার ভাষায়, বেতন কাঠামো এমন হওয়া উচিত যাতে একজন মানুষ উচ্চবিলাসী না হলেও সম্মানজনক ও স্থিতিশীল জীবনযাপন করতে পারেন। তাই বেতন নির্ধারণে শুধু বাজার চাহিদা নয়, মূল্যস্ফীতির প্রভাবও বিবেচনায় আনা উচিত।

তিনি মনে করেন, প্রতি বছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন সমন্বয় করলে কর্মীরা কিছুটা আর্থিক স্বস্তি পাবেন এবং উৎপাদনশীলতাও বাড়বে।

মো. আলমগীর বলেন, অনেক বিদেশি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে বেতন কাঠামো তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও অধিকাংশ দেশীয় কোম্পানিতে তা এখনও দুর্বল। এর পেছনে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও কর্পোরেট সংস্কৃতির সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করেন তিনি।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব বৈষম্য দূর হবে এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে একটি আধুনিক শ্রমবাজার গড়ে উঠবে।

বেসরকারি খাতে বেতন বৃদ্ধির হার কম থাকার পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে এফবিসিসিআই মহাসচিব বলেন, চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই বিকল্প নিয়োগ দিতে পারে, ফলে শ্রমিকরা চাপের মুখে থাকে। এছাড়া সঠিক অডিট ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় কার্যকর তদারকির অভাবও একটি বড় সমস্যা।

এই পরিস্থিতিকে তিনি আধুনিক যুগের ‘শোষণ’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, এর ফলে কর্মীরা দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে যায়।

সবশেষে মো. আলমগীর বলেন, নাগরিকের মানবিক মর্যাদা রক্ষা ও ন্যায্য জীবিকার নিশ্চয়তার জন্য শুধু সরকারি-বেসরকারি ভেদে নয়, সামগ্রিকভাবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত বেতন কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।

তিনি সতর্ক করে বলেন, এমন কাঠামো না গড়ে তুললে বৈষম্য ও দুর্নীতি আরও বাড়বে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক ভারসাম্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়