১০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হলে খতিয়ে দেখবে এনবিআর
ফাইল ছবি
এখন থেকে যেসব করদাতার বার্ষিক ব্যাংক লেনদেন ১০ লাখ টাকার বেশি, তাদের আয়কর রিটার্ন নিয়মিতভাবে খতিয়ে দেখবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট।
এনবিআরের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে এ সিদ্ধান্তের উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারও রিটার্নে বড় অঙ্কের ব্যাংক হিসাব গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেলে হিসাব জব্দ ও মামলা করা হবে।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করদাতারা কি তাদের ব্যাংক লেনদেনের সব তথ্য রিটার্নে দেখিয়েছে কি না, তা যাচাই করা হবে। বিশেষভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে করা আয়, ব্যয়, সম্পদ কেনাবেচা—এই সব তথ্যের প্রকৃত অবস্থা রিটার্নে উল্লেখ হয়েছে কি না, তা কঠোরভাবে পরীক্ষা করা হবে। বিভিন্ন সময়ে এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে যে, করদাতারা ব্যবসার তথ্য গোপন করে বা আয়ের উৎস লুকিয়ে রিটার্ন জমা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক করদাতা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করেন। এসব ব্যবসার আয়-ব্যয় ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। কর ফাঁকি দিতে অনেকে ব্যাংক হিসাব লুকিয়ে রাখেন বা রিটার্নে উল্লেখ করেন না। এতে এনবিআরের জন্য প্রকৃত লেনদেনের হিসাব বের করা কঠিন হয়ে পড়ে।
অনেকে বড় অঙ্কের সঞ্চয় বা উত্তাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করলেও রিটার্নে তা উল্লেখ করেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কাজ মূলত কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে করা হয়। এছাড়া অনেক করদাতার সন্তান বিদেশে পড়তে গেলে স্টুডেন্ট ফাইলে টাকা পাঠানো হয়, যা রিটার্নে উল্লেখ করা হয় না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক করদাতা কোটি টাকার একাধিক গাড়ি ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাট/প্লটের মালিক। এই সম্পদগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে কেনা হলেও, অনেকেই রিটার্নে এগুলো উল্লেখ করেন না। এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী কোটি টাকার গাড়ির মালিকের সংখ্যা ৬০ হাজারের বেশি।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে কালো টাকা ঠেকাতে সচেষ্ট থাকবে অন্তর্বর্তী সরকার: অর্থ উপদেষ্টা
অন্যদিকে, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) তথ্য অনুযায়ী কোটি টাকার ফ্ল্যাটের মালিক এক লাখের বেশি।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, অনেকে রিটার্নে তথ্য গোপন করে কর ফাঁকি দিচ্ছেন। এটা চলতে পারে না। ব্যাংকের মাধ্যমে আয়-ব্যয় ও সম্পদ করছে, সেই তথ্য অবশ্যই রিটার্নে থাকতে হবে। রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হলে আমরা কঠোর হবেন।
সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন থাকলেও অনেকে রিটার্নে তা উল্লেখ করেন না। ব্যাংকের প্রকৃত লেনদেন দেখলে কর ফাঁকি দেওয়া কমবে। রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখে সারা দেশের কোটিপতির সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়, যা প্রকৃতির সঙ্গে মেলে না।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছরের জানুয়ারি মাসে ব্যাংকের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এরপর সেটি আয়কর রিটার্নের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এই প্রক্রিয়ায় ধরা পড়া লেনদেনের মধ্যে থাকবে বড় ব্যবসার লেনদেন, সম্পদ কেনাবেচা, বিদেশে টিউশন ফি প্রেরণ এবং সঞ্চয়পত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি।
কিন্তু রিটার্নে জমা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোটিপতির সংখ্যা গত পাঁচ বছরে গড়ে ২৫ হাজারেই আটকে আছে। অর্থাৎ, রিটার্নের তথ্য এবং ব্যাংক হিসাবের মধ্যে বড় ফাঁক রয়েছে।
সাবেক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অসৎ করদাতারা কর ফাঁকির জন্য রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দেন। ব্যাংকের তথ্য পাওয়া গেলে এনবিআর সহজেই এই ফাঁকি শনাক্ত করতে পারবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে, বছরে ১০ লাখ টাকার আয় সাধারণ মানুষের জন্য অত্যধিক না হয়ে হয়রানি তৈরি না করুক।
এনবিআর ডিজিটাল ট্র্যাকিং জোরদার করতে এবং করদাতাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ব্যাংক হিসাব এবং রিটার্নের তথ্য অনলাইনে মিলিয়ে দেখার ব্যবস্থা করছে। এতে কর ফাঁকির পরিমাণ কমবে এবং দেশের রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








