২ হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ পাচ্ছে রাকাব
ফাইল ছবি
বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। বছরের পর বছর লোকসানে চলা এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ মূলধনের চেয়ে বেশি হওয়ায় ব্যাংকটি দেউলিয়াত্বের মুখে দাঁড়িয়ে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার রাকাবকে ২ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়নযোগ্য ঋণ দিয়েছে, যার গ্যারান্টি দিয়েছে রাষ্ট্র নিজেই।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ট্রেজারি অ্যান্ড ডেবট ম্যানেজমেন্ট (টিডিএম) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া হচ্ছে, যা ব্যাংকটির অস্তিত্ব রক্ষায় অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে।
এর আগে ‘বিশেষ কৃষি ও পল্লিঋণ’ কর্মসূচির আওতায় রাকাব ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল, যার পরিশোধ মেয়াদ গত আগস্টে শেষ হয়। সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় সেই ঋণের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এবার নতুন ঋণের বিপরীতে আবারও রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, যা অর্থ মন্ত্রণালয় ৮ সেপ্টেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে।
টিডিএম উইংয়ের প্রধান মোহা. রাশেদুল আমীন বলেন, ব্যাংকটিকে ঋণ না দিলে তা দেউলিয়া হয়ে যেত এবং কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারত না। যেহেতু এটি কৃষি উৎপাদন কার্যক্রমে ঋণ বিতরণ করে, তাই উৎপাদনের স্বার্থেই পুনঃঅর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: তিন ব্যাংককে বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিলো বিএসইসি
নতুন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ব্যবসায়িক পরিসর বৃদ্ধি
- খেলাপি ঋণ হ্রাস
- দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য এক মাসের মধ্যে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়া
- আগের ঋণ সময়মতো পরিশোধ না হলে ভবিষ্যতে আর কোনো রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি না দেওয়ার সতর্কতা
রাকাবের সাম্প্রতিক আর্থিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে:
- বিতরণকৃত ঋণের ২১% খেলাপি
- উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করে সরকার নির্ধারিত সুদে ঋণ দেওয়ার ফলে গত কয়েক বছরে লোকসান হয়েছে ১,৫৮২ কোটি টাকা
- ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট ঋণ বিতরণ ছিল ৭,১৭৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ঋণ ১,৪৫১ কোটি টাকা
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ব্যাংকটির উচ্চাভিলাসী কার্যক্রম—যেমন হিমাগার ও অটোরাইস মিল মালিকদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান—লোকসানের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পুনঃঅর্থায়নের টাকা কৃষিঋণ বিতরণের জন্য হলেও, কিছু ঋণগ্রহীতা তা ব্যবহার করেছেন উচ্চাভিলাসী ব্যবসায়িক প্রকল্পে।
ঋণ প্রদানের মাধ্যমে রাকাব আপাতত দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেলেও, ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে শর্তমাফিক কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যাবশ্যক। এখন দেখার বিষয়, নতুন ঋণ ও রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি ব্যাংকটির পুনরুদ্ধারে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








