আফগানিস্তানের কাছে হার দিয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

ছবি: সংগৃহীত
আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হার দিয়ে সূচনা করল বাংলাদেশ। আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও হাশমতউল্লাহ শহিদির দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ১৭ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে আফগানিস্তান। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
বুধবার (৮ অক্টোবর) আবুধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। তবে পুরো ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় জর্জরিত ছিল দলটি। ৪৮.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে মাত্র ২২১ রান।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথম ধাক্কা আসে তানজিদ হাসান তামিমের আউটে (১০)। এক ওভার পর নাজমুল হোসেন শান্তও (২) সাজঘরে ফেরেন। ওয়ানডে অভিষেকে ওপেন করতে নেমে সাইফ হাসান কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও ৩৭ বলে ৫ চারে ২৬ রান করে ক্যাচ তুলে দেন।
প্রথম তিন উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন তাওহীদ হৃদয় ও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। মন্থর গতিতে এগিয়ে গিয়ে দুজন গড়েন ১০১ রানের কার্যকরী জুটি। রয়েসয়ে ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি তুলে নেন হৃদয় (৮৫ বলে ৫৬, ৩ ছক্কা, ১ চার)। তবে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে বিদায় নেন তিনি।
হৃদয়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অধিনায়ক মিরাজও। রশিদ খানের গুগলিতে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরার আগে ৮৭ বলে ৬০ রান করেন তিনি, যেখানে ছিল একটি চার ও একটি ছক্কা। এই ইনিংসের মাধ্যমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১২ ইনিংসে মিরাজের সংগ্রহ দাঁড়াল ৪৭১ রান (গড় ৫২.৩৩), যাতে রয়েছে ৪ ফিফটি ও ১ সেঞ্চুরি। উল্লেখযোগ্যভাবে, অবসরের আগে মুশফিকুর রহিমের ছিল ১৫ ইনিংসে ৪৬০ রান (গড় ৩২.৮৫)।
আরও পড়ুন: টস জিতে আফগানদের বিরুদ্ধে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
এরপর দ্রুত বিদায় নেন জাকের আলি অনিক (১০) ও নুরুল হাসান সোহান (৭)। তানজিম হাসান সাকিবের ১৭ রান ও তানভির ইসলামের অপর প্রান্তে ১১ রানের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ২২১ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
আফগানিস্তানের হয়ে সমান তিনটি করে উইকেট নেন রশিদ খান (১০-০-৩২-৩) ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই (৯-০-৪০-৩)। ৯.১ ওভারে ৩ উইকেট তুলে নেন তরুণ স্পিনার গাজানফার, এছাড়া খারোটে নেন ১ উইকেট। রশিদ খান এই ম্যাচে মাত্র ১১৫ ম্যাচ ও ১০৭ ইনিংসে ২০০ উইকেট পূর্ণ করে স্পিনারদের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততম বোলার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন। তার চেয়ে কম ম্যাচে (১০৪) এটি করেছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি সাকলাইন মুশতাক।
২২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ইতিবাচক ছিলেন আফগান ওপেনাররা। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান প্রথম ৯ ওভারে উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ রান যোগ করেন। ইনিংসের দশম ওভারে তানভির ইসলামের বলে স্টাম্পড হয়ে ফেরেন ইব্রাহিম (২৩)।
এরপর ১৫ বলে ৫ রান করা সেদিকউল্লাহ অতলকে ক্যাচ আউট করেন তানজিম হাসান সাকিব। তবে তৃতীয় উইকেটে রহমত শাহ ও গুরবাজ গড়ে তোলেন ৭৮ রানের জুটি। রয়েসয়ে খেলে দুজনই অর্ধশতক পূর্ণ করেন—রহমত ৭০ বলে ৫০ ও গুরবাজ ৭৬ বলে ৫০ রান করেন।
দ্রুত পরপর দুই ওভারে সাকিব ও মিরাজ ফেরান রহমত ও গুরবাজকে। কিন্তু এরপর আর বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরতে পারেনি। পঞ্চম উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়ে জয় প্রায় নিশ্চিত করেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও হাশমতউল্লাহ শহিদি।
সাকিবের এক ওভারে টানা তিনটি চার মেরে ৪৪ বলে ৪০ রান করে আউট হন ওমরজাই। বাকি কাজ শেষ করেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ (অপরাজিত ৩৩) ও মোহাম্মদ নবী (অপরাজিত ১১)। ৪৭.১ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখে ২২৫ রান তুলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান।
বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি উইকেট নেন সাকিব (৭-১-৩১-৩), ১টি করে নেন তানভির ইসলাম (১০-০-৪২-১) ও মেহেদী মিরাজ (১০-১-৩২-১)।
বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভারে ২২১ (মিরাজ ৬০, হৃদয় ৫৬, সাইফ ২৬; রশিদ ৩/৩২, ওমরজাই ৩/৪০, গাজানফার ৩/৫৫)
আফগানিস্তান: ৪৭.১ ওভারে ২২৫/৫ (গুরবাজ ৫০, রহমত ৫০, ওমরজাই ৪০, শহিদি ৩৩*, নবী ১১*; সাকিব ৩/৩১, মিরাজ ১/৩২, তানভির ১/৪২)
ফল: আফগানিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: আজমতউল্লাহ ওমরজাই (৪০ রান, ৩ উইকেট)
তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে আফগানিস্তান। সিরিজে টিকে থাকতে হলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে। আগামী শনিবার (১১ অক্টোবর) একই ভেন্যু আবুধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই মুখোমুখি হবে দুই দল।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি