News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:০২, ৯ অক্টোবর ২০২৫

গাজা যুদ্ধবিরতিতে ঐকমত্যে ইসরায়েল–হামাস: ট্রাম্প

গাজা যুদ্ধবিরতিতে ঐকমত্যে ইসরায়েল–হামাস: ট্রাম্প

ছবি: সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে নেওয়া ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। 

বুধবার (৮ অক্টোবর) সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এ তথ্য নিশ্চিত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

ট্রাম্প লেখেন, আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, ইসরায়েল ও হামাস—উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে স্বাক্ষর করেছে। এর অর্থ হলো খুব শিগগিরই সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, এবং ইসরায়েল তাদের সৈন্যদের গাজা থেকে প্রত্যাহার করবে। এটি শক্তিশালী, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির দিকে প্রথম পদক্ষেপ।

ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই কাতার, মিশর, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের অংশগ্রহণে মিসরের শারম আল শেখে তৃতীয় দিনের মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

আলোচনায় যুক্ত ছিলেন মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি এবং তুরস্কের গোয়েন্দাপ্রধান ইব্রাহিম কালিন।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ জানায়, গাজা যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের চুক্তিতে পৌঁছেছে হামাস ও ইসরায়েল। 
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা ঘোষণা করেছেন যে, গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের সব বিধান ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একমত হয়েছে উভয় পক্ষ। এর ফলে যুদ্ধের অবসান ঘটবে, ইসরায়েলি জিম্মিরা দেশে ফিরে আসবে, ফিলিস্তিনি বন্দীরা মুক্তি পাবে এবং গাজায় খাদ্যসহ মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

হামাসও এক বিবৃতিতে জানায়, এই চুক্তি গাজার যুদ্ধের অবসান ঘটাবে, দখলদার বাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহার নিশ্চিত করবে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেবে। একইসঙ্গে বন্দি বিনিময়ের প্রক্রিয়াও বাস্তবায়ন করা হবে।

আরও পড়ুন: গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাজি ইসরায়েল: ট্রাম্প

সংগঠনটি আরও জানায়, চুক্তিটি বাস্তবায়নে মধ্যস্থতা করায় কাতার, মিশর, তুরস্ক ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আশা করি, ইসরায়েলি সরকার চুক্তির শর্তগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে চলবে। ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চুক্তিকে “ইসরায়েলের জন্য মহান দিন” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই সমঝোতার ফলে জিম্মিরা তাঁদের ঘরে ফিরে আসবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দেশটির মন্ত্রিসভা এই পরিকল্পনার অনুমোদন দিতে পারে। একই সঙ্গে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নেসেট (ইসরায়েলি পার্লামেন্ট)-এ ভাষণ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

শান্তি আলোচনায় অগ্রগতির পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, মিসরের আলোচনায় চূড়ান্ত চুক্তি এখন নাগালের মধ্যে। চুক্তি হলে আমি নিজে ঘোষণা দিতে মিসরে যাব।

হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুক্রবার সকালে ওয়াশিংটনের ওয়াল্টার রিড মেডিকেল সেন্টারে বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এরপর শনিবার বা রবিবার তিনি মিসর যেতে পারেন।

গত মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা সংকট নিরসনে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এতে যুদ্ধবিরতি, জিম্মি মুক্তি, মানবিক সহায়তা, গাজার পুনর্গঠন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, ও দীর্ঘমেয়াদি স্বায়ত্তশাসনের মতো ধাপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রথম দফায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা এবং হামাসের হাতে থাকা ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে—যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা বহু ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। ইসরায়েলের দাবি, বর্তমানে ৪৭ জন এখনো জিম্মি আছেন, যাদের মধ্যে ২৫ জন বেঁচে নেই। ওই দিনের পর থেকেই ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯ জন শিশু।

গাজা যুদ্ধবিরতির প্রথম দফা বাস্তবায়নে ইসরায়েল ও হামাসের এই ঐকমত্যকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা। এখন প্রশ্ন, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলো কতটা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।

সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, সিবিএস, ট্রুথ সোশ্যাল, কাতার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়