তিন মাসে মোহাম্মদপুরে গ্রেফতার ১২০০

ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গত তিন মাসে চুরি, ছিনতাই, মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, ভূমি দখল, কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্র মহড়া ও হত্যাসহ নানা অপরাধ বেড়ে গেছে।
এলাকাবাসীর মতে, মোহাম্মদপুর এখন রাজধানীর অন্যতম ‘অপরাধপ্রবণ’ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে জেনেভা ক্যাম্পকে পুলিশ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা অপরাধীদের অন্যতম ‘আস্তানা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
জেনেভা ক্যাম্পে সক্রিয় রয়েছে একাধিক অপরাধচক্র, যাদের মধ্যে ‘কব্জিকাটা গ্রুপ’ ও ‘আয়েশা গ্রুপ’ উল্লেখযোগ্য। এই চক্রগুলো দিনে আত্মগোপনে থেকে রাতে ছিনতাই, মাদক বিক্রি ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত থাকে। ‘আয়েশা গ্রুপ’-এর প্রধান মো. আসাদ ওরফে আরশাদ প্রকাশ আয়েশা এবং তার সহযোগী ইউসুফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই ও ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল।
এছাড়া, বুনিয়া সোহেল নামে একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে এবং প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় একাধিক বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে যৌথ বাহিনী। পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে পরিচালিত অভিযানে ১২০০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
অভিযানে সেনাবাহিনী ও র্যাব-২-এর সমন্বয়ে জেনেভা ক্যাম্প থেকে দেশীয় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যসহ ৪৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় ৮টি ককটেল, ২টি পেট্রোল বোমা, ১১টি চোরাই মোবাইল ফোন ও ৫০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
তবে, অভিযানে গ্রেফতার হওয়া অনেকেই আইনের ফাঁক গলে জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন, যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুরে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, এনসিপি নেতাসহ কারাগারে ৪
সমাজ অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক এই প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অপরাধীদের মনে ভয় জাগাতে পুলিশকে আরও কঠোর অবস্থানে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ড. তৌহিদুল হক জানিয়েছেন, জেনেভা ক্যাম্প দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারিদের আখড়া হিসেবে পরিচিত। বারবার গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় অপরাধে ফিরার প্রবণতা এলাকায় নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করছে। তিনি পুলিশকে কঠোর অবস্থানে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে অপরাধীরা ভয় পায়।
কিশোর অপরাধীদের অস্ত্র মহড়ার ভিডিও এবং সিসিটিভি ফুটেজে ছিনতাই ও ডাকাতির দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
এলাকাবাসীর মতে, যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান এবং নিয়মিত নজরদারির ফলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি করেছে। অপরাধ দমনে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে,
- জামিনে মুক্ত হওয়া অপরাধীদের পুনরায় অপরাধে জড়ানো রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ,
- স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সহযোগিতা,
- নিয়মিত অভিযান ও তৎপর নজরদারি।
এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হলে মোহাম্মদপুরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং আইনশৃঙ্খলার মান বৃদ্ধি পাবে।
এই পরিস্থিতিতে, অপরাধীদের পুনরায় অপরাধে জড়ানো রোধে আইনি প্রক্রিয়া কঠোর করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত নজরদারি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি