News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ১ এপ্রিল ২০১৫
আপডেট: ০৪:৫৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মামলা করবো কার বিরুদ্ধে, যার গায়ে দুর্গন্ধ: কামাল

মামলা করবো কার বিরুদ্ধে, যার গায়ে দুর্গন্ধ: কামাল

ঢাকা: শেষ পর্যন্ত আইসিসির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলেন আ হ ম মোস্তফা কামাল। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করে আইসিসির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। সেই সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বকাপের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে আইসিসির সভাপতিকে ট্রফি দিতে না দেয়ার কারণও জানান কামাল। তার কথাগুলো নিউজবাংলাদেশের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

বুধবার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কামাল বলেন, আমি প্রায় ছয় বছর আইসিসির সাথে ছিলাম। প্রথম তিন বছর বোর্ড অব মেম্বার হিসেবে। পরের দুই বছর আইসিসির সহ-সভাপতি হিসেবে। নয় মাস আইসিসি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আজ বুধবার আইসিসির সভাপতি হিসেবে নয় মাস পূর্ণ করলাম। আসলে ক্রিকেট একটি গৌরবের খেলা। ক্রিকেটে আইন আছে, নিয়ম আছে। আইসিসিতে কার কী দায়িত্ব তা সব কিছুই বন্টন করা আছে। সংবিধানের ৩.৩ ধারায় আইসিসি ইভেন্টে ট্রফি দেয়ার দায়িত্ব সভাপতিকে দেয়া আছে। কিন্তু আমি সভাপতি থাকা অবস্থায় ফাইনালে আমাকে ট্রফি দিতে দেয়া হল না।

তার কারণ ১৯ তারিখে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে আমি কথা বলেছি? আমার অপরাধ আমি বাংলাদেশের মানুষের হয়ে কথা বলেছি? মেলবোর্নের মাঠে এর আগে সবগুলো ম্যাচেই স্পাইডার ক্যামেরা ছিল। বাংলাদেশের ম্যাচের দিন কেন সেই ক্যামেরা রাখা হয়নি? এরপর সেই ম্যাচে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপর মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে বার বার লেখা উঠেছে- জিতেগা ইন্ডিয়া জিতেগা। তখন আমি আইসিসির সিইওকে এটা বন্ধ করতে অনুরোধ করি। এছাড়া সেই ম্যাচে অনেকগুলো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়নি। সবকিছু ঠিকভাবে ব্যবহার করলে আম্পায়াররা এমন সিদ্ধান্ত দিতেন না।

তাদের অভিযোগ আমি দেশের মানুষের জন্য কেন কথা বলি? ফাইনাল ম্যাচের আগের দিন চার থেকে পাঁচজন আইসিসির পরিচালককে নিয়ে মিটিং করা হল। সেখানে সিদ্ধান্ত হল, ২৯ তারিখে ফাইনালে তারা আমাকে ট্রফি দিতে দেবে না। কারণ কি? ঐ বিতর্কিত মানুষ (নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন) আমাকে বলে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। নতুবা আমাকে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আমি তখন জানিয়ে দিয়েছি, আমি ১৬ কোটি মানুষের হয়ে কথা বলেছি। আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করবো কেন?

সেখানে আমি অনেক কথা বলেছি। তাদের বলেছি, আপনারা ক্রিকেটের ক্ষতি করবেন না। আমি তো আইসিসির সভাপতি। আমি কেন ক্ষমা চাইব? তারা তখন বলে, আমাকে ট্রফি দিতে দেওয়া হবে না। আমি বলি তাহলে কীভাবে সংবিধান পরিবর্তন করবেন? তারা আমার কথা রাখেনি, জোর করে ট্রফি দিয়েছে সে (শ্রীনিবাসন)। আমি পুরস্কার দিতে পারিনি। তার আগের দিন রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করেছি। আমাদের হক কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছে এর বিচার চেয়েছি।

পরের দিন ফাইনালে ট্রফি দেয়ার আগে সেই বিতর্কিত মানুষের নাম মাইকে ঘোষণা করার সাথে সাথেই পুরো স্টেডিয়ামে ৯০ হাজার দর্শক মানি না, মানি না বলে প্রতিবাদ করেছে। আমি মনে করি সত্যের বিজয় হয়েছে। তিনি সেদিন অপমানিত হয়ে মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছেন। শচীন টেন্ডুলকার তাকে রক্ষা করেছে। যে নিজের দেশে নানা কারণে বিতর্কিত তার সাথে আমি কি কারণে মিটিং করবো? এদের মন মানসিকতা ভালো না। এরা ক্রিকেটের ক্ষতি করছে। ওনার নাম বলতে আমার ঘৃণা হয়। এ ধরণের ঘটনা আইসিসিতে আগে ঘটেনি। উনি আসার পর এমন ঘটলো। যখন দেখলাম ক্রিকেটে অনিয়ম হচ্ছে তখন আমি তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলাম। দেশের ১৬ কোটি মানুষের বিবেক হিসেবে দাঁড়িয়েছি। বিশ্ব ক্রিকেটের প্রেমিক মানুষের বিবেক হিসেবে দাঁড়িয়েছি।

সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, আপনি আইসিসি সভাপতি ছিলেন। এবারের বিশ্বকাপে ১৪টি দেশ খেলেছে। সামনে বিশ্বকাপে ১০টি দেশ খেলবে। এসব তো আপনি আইসিসিতে থাকা অবস্থায় হয়েছে? এর জবাবে তিনি বলেন, “যা হচ্ছে তা অন্যায়। এটা ঠিক হচ্ছে না। এবার তো অনেকগুলো দেশ খেলেছে। কোন সমস্যা হয়েছে কি? ওনারা নিজেদের সুবিধার জন্য এসব করছেন। নিজেদের সুবিধার জন্য প্রতিবছর তারা ক্রিকেটের নিয়ম বদলায়। আমি এর প্রতিবাদ করেছি। আসলে এগুলো পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়।”

যখন বিগ থ্রি হলো তখনও আপনি আইসিসিতে ছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষমতা খর্ব করা হলো সেই সময় আপনার ভূমিকা কি ছিল? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সেই সময় আমি আইসিসির সহ-সভাপতি ছিলাম। তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি (নাজমুল হাসান পাপন)কে নিয়ে অনেক প্রতিবাদ করেছি। অনেক কিছু বন্ধ করেছি। তখনও আমরা বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করেছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য কাজ করেছি।”

আপনি কি মনে করেন আপনার পদত্যাগেই সমস্যার সমাধান হবে? এর জবাবে কামাল বলেন, “আইসিসির বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই। কিছু ব্যাক্তির কারণে আইসিসিকে দোষ দেয়া যাবে না। আমি সেই খারাপ লোকদের সরানোর জন্যই পথ করে দিলাম। আমি কেন পদত্যাগ করলাম, সেটা সারা দুনিয়ার মানুষ দেখুক। সত্য কথা বলা কি অপরাধ? আমি সত্য কথা বলতে ভয় পাই না। যারা সত্য বলতে ভয় পায় সেটা তাদের সমস্যা। আজকে বাংলাদেশে ম্যাচ ফিক্সিং হলে আইসিসিতে নানা সমালোচনা হয়। অথচ ওদের দেশে ফিক্সিং হলে এসব নিয়ে কিছুই হয় না। ক্রিকেটে এসব বন্ধ হওয়া উচিত। আমি দেশের ১৬ কোটি মানুষের পক্ষে কথা বলেছি।”

ফাইনালের আগের দিন এক ঘণ্টার মিটিংয়ে কী হয়েছে? আপনাকে কী বলেছে? এমন প্রশ্নে সাবেক আইসিসি সভাপতি বলেন, “ওটা কোন মিটিং নয়। এক ঘণ্টা আগে ফোনে ডেকে বলা হয়েছে, আসেন মিটিং করবো। মিটিংয়ে আমাকে বলা হলো বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দিন আমি যেসব কথা বলেছি সেসব কথা পরিহার করতে হবে। অথবা আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে। আমি বলেছি, আমি তা করবো না। আমি আইসিসির সভাপতি।

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে কি ফিক্সিং হয়েছে? এর জবাবে কামাল বলেন, “না, আমি সেটা বলছি না। আমি বলেছি ম্যাচের অনেক সিদ্ধান্তে ত্রুটি ছিল।”

শ্রীনিবাসন বলেছেন বিগ থ্রি নয়,সামনে আইসিসি হবে বিগ অন- এসব নিয়ে মিটিংয়ে কী আলোচনা হয়েছে? আপনি কি বিষয়টির প্রতিবাদ করেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, “সেখানে আমাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমি প্রতিবাদ করব কীভাবে? আইসিসিতে নিয়ম হলো যার বিরুদ্ধে কথা হবে সে মিটিংয়ের সময় থাকবে না।”

আইসিসির ট্রফি নিয়ে যেটা করা হয়েছে সেটা তো আইসিসির সংবিধান বিরোধী। এখন আপনি কি মামলা করবেন? বিষয়টি নিয়ে সাবেক বিসিবি সভাপতির ভাষ্য, “আমি মামলা করবো না। সেই সময় অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ থেকেও অনেক মানুষ ফোন করেছে মামলা করতে। কিন্তু আমি মামলা করবো কার বিরুদ্ধে, একটা ব্যক্তির বিরুদ্ধে যার গায়ে দুর্গন্ধ। সে তো নিজেদের দেশেই বিতর্কিত।  তার বিরুদ্ধে মামলা করলে কি হবে? মামলা করলে সে দোষ চাপাবে আইসিসির ওপর। তখন সে বলবে আমাকে বলেছে আইসিসিই ট্রফি দিতে। তখন মামলা করতে হবে আইসিসির বিরুদ্ধে। কিন্তু আইসিসির বিরুদ্ধে মামলা করার প্রশ্নই আসে না।”

তার এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোন ক্ষতি হবে কি? এই প্রশ্নে কামাল বলেন, “এতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কোনো ক্ষতি হওয়ার প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সেদিনের ঘটনায় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করেছে। আইসিসি তাদের সেই অভিযোগের জবাব দেবে।”

নিউজবাংলাদেশ.কম/এসএস/এফকে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়