ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় বুনন শিল্প মনোনীত টাঙ্গাইল শাড়ি
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা অদূরে টাঙ্গাইল জেলার প্রাচীন কারখানায় আজও শোনা যায় তাঁতের ছন্দ। শত শত তাঁতি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পকে জীবনধারার অংশ হিসেবে ধরে রেখেছে। রঙিন সিল্ক ও কটন থ্রেড দিয়ে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু বাংলাদেশেরই নয়, সমগ্র ভারত উপমহাদেশে উৎসব–বিয়েবাড়ির পোশাক হিসেবে পরিচিত।
২০২৫ সালে এই শতাব্দীপ্রাচীন তাঁতশিল্পকে ইউনেস্কোর ‘Intangible Cultural Heritage of Humanity’ তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রতিটি টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি হয় ঐতিহ্য ও কারুশিল্পের একত্রিত মেলবন্ধনে। এতে স্থানীয় সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত নান্দনিক নকশা, সূক্ষ্ম থ্রেড এবং বুনন পদ্ধতি প্রতিফলিত হয়। সাধারণত পুরুষ তাঁতিরা সুতা রঙায়, বুনে এবং নকশা তৈরি করে; নারীরা চরকিতে সুতা ঘুরিয়ে সহযোগিতা করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মনোনয়ন শুধুমাত্র শাড়ি বা তাঁতশিল্পের স্বীকৃতি নয়, বরং শত শত তাঁতি পরিবারের জীবিকা ও সামাজিক মর্যাদা সংরক্ষণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ১১৪ জনের মরদেহ উত্তোলন শুরু
ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেলে টাঙ্গাইল শাড়ির আন্তর্জাতিক পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন বাজার ও পর্যটন সম্ভাবনা তৈরি হবে। এটি তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হবে এবং ঐতিহ্যবাহী বুনন কৌশল সংরক্ষণে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করবে।
টাঙ্গাইল শাড়ি তার স্বতন্ত্র নকশা, বিশেষ করে জ্যাকার্ড ও ডবি মেশিন ব্যবহার করে তৈরি জমকালো পাড় ও আঁচলের জন্য আলাদা পরিচিতি অর্জন করেছে। ইউনেস্কোর প্রক্রিয়ার পর, চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এটি বাংলাদেশের পঞ্চম ঐতিহ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্থান করবে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু একটি পোশাক নয়; এটি আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। ইউনেস্কোর এই সম্ভাব্য স্বীকৃতি তাঁতিদের কঠোর পরিশ্রম এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার এক বিশাল সুযোগ।
যদিও সম্প্রতি কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং সস্তা মেশিন বোনা কাপড়ের প্রতিযোগিতা তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ কমিয়েছে, তাঁতরা আশাবাদী যে, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি টাঙ্গাইল শাড়ি শিল্পকে নতুন মর্যাদা দেবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণে সহায়তা করবে।
এমনভাবে, টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্পকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এনে দেওয়ার এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কূটনীতির ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র: এপি
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








