সমাজে সহিংসতা নির্মূলের জন্য সর্বাঙ্গীন শিক্ষা জরুরি
ছবি: নিউজবাংলাদেশ
শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে সহিংসতা নির্মূলের পথ খুঁজে রাজধানীতে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) জাতীয় বাহা’ই কেন্দ্রের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সভায় দেশি-বিদেশি শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বিজ্ঞানীরা অংশগ্রহণ করে শিক্ষার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, সমাজে দৃশ্যমান সহিংসতার পাশাপাশি কাঠামোগত বৈষম্যও বিদ্যমান। নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য আসলে সহিংসতারই অংশ, যা শিক্ষার প্রাথমিক স্তরেই নির্মূল না করলে সমাজ মুক্তি পাবে না।
কানাডার ডেলহাউজী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুফিয়া ইসলাম উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সংবিধানে লিঙ্গসমতার নিশ্চয়তা থাকলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে শিক্ষার প্রসার অপরিহার্য বলে তিনি মত দেন।
জাতীয় কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ আব্দুল মোমিন মুসাব্বীর বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা অপরিহার্য। এজন্য ব্যক্তি, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
আরও পড়ুন: বেগম রোকেয়াকে ‘কাফির-মুরতাদ’ বললেন রাবি শিক্ষক মাহমুদুল
আইসিডিডিআরবি’র শিশু বিকাশ বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষক শামীমা শিরাজী জানান, শিশুদের চারপাশে সংঘটিত সহিংসতা তাদের মানসিক বিকাশে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে।
হামদার্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহাম্মদ মারুফ বিল্লাহ্ বলেন, পাঠ্যপুস্তক ও পরীক্ষার সীমা ছাড়িয়ে শিক্ষাকে চরিত্র গঠন ও মানসিক বিকাশের মাধ্যম করতে হবে।
বাহা’ই অংশগ্রহণকারী ইমপালস হসপিটালের মেডিকেল অফিসার ডা. শিভা শাহিদী লিঙ্গ বৈষম্যকে পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতার উৎস হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি আব্দুল-বাহা’র উক্তি উদ্ধৃত করে বলেন, নারী-পুরুষ পাখির দুটি ডানার মতো—একটি দুর্বল হলে উড়তে পারে না।
লাইল্যাক ডিজিটাল ওয়েলনেস প্ল্যাটফর্মের সিইও কামরান আনান্দ হক বলেন, শিক্ষা কেবল তথ্যের স্থানান্তর নয়; শিল্প, কলা ও সঙ্গীতের চর্চা মানব আত্মাকে স্পর্শ করে এবং সহিংসতা নির্মূলে তা অপরিহার্য।
বিজ্ঞাপন সংস্থার ডিজিটাল মার্কেটিং প্রধান ও আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি কর্মী রহিম সরওয়ার বলেন, আইন-কানুন দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়া সম্ভব নয়; এজন্য শিক্ষাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে যাতে মানবিক, মূল্যবোধভিত্তিক ও সহনশীল সমাজ গড়ে ওঠে।
বাহা’ই ট্রেনিং ইনস্টিটিউট বোর্ডের সদস্য নাজিয়া আলম বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে কথার সঙ্গে কাজের সামঞ্জস্য জরুরি। শৈশব থেকেই নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশের বাহা’ই পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অফিসের চেয়ারপার্সন ও আইসিডিডিআরবি’র ইমিরেটাস সায়েন্টিস্ট ডা. জেনা শাহিদী।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








