News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

বেগম রোকেয়া দিবসে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন

বেগম রোকেয়া দিবসে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন

ফাইল ছবি

বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়’ করার ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

প্রধানমন্ত্রী-সমমান মর্যাদাপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং নিশ্চিত করেছে যে, অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক মঞ্চ থেকেই তিনি এই পরিবর্তনের ঘোষণা দেন।

নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ। 

নারী শিক্ষা, অধিকার, মানবাধিকার ও জাগরণে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর চারজন বিশিষ্ট নারীকে বেগম রোকেয়া পদকও প্রদান করা হয়।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন রুভানা রাকিব (নারীশিক্ষা–গবেষণা), কল্পনা আক্তার (নারী অধিকার–শ্রম অধিকার), ঋতুপর্ণা চাকমা (নারী জাগরণ–ক্রীড়া), নাবিলা ইদ্রিস (মানবাধিকার)।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জানান, সময়ের দাবি ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মন্ত্রণালয়ের নতুন নামকরণ করা হয়েছে। 

তার মতে, এই পরিবর্তন নারীদের নেতৃত্ব, অগ্রগতি ও রাষ্ট্রগঠনে সক্রিয় ভূমিকাকে আরো স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করবে।

তিনি বলেন, মেয়েরা গণ-অভ্যুত্থানে তাদের নেতৃত্ব দেখিয়েছে। আজকের নারীসমাজ গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী নারীসমাজ। এই নারীসমাজ শুধু নারীদের নয়, সবাইকে উজ্জীবিত করবে। তাই নারীদের সামনে রেখেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন: ১০০ বছরেও আরেকজন রোকেয়া সৃষ্টি করতে পারিনি: প্রধান উপদেষ্টা

ড. ইউনূস বক্তৃতার প্রায় পুরোটা জুড়ে বেগম রোকেয়ার জীবন, চিন্তা ও নারীমুক্তির সংগ্রামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। 

তিনি বলেন, রোকেয়া যেসব দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন, যেসব স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন, আমরা সেগুলোকে এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। শুধু কথা বলেছি, কিন্তু অগ্রসর হতে পারিনি। কেন পারলাম না, তা খুঁজে বের করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, আজকের আয়োজন শুধু রোকেয়াকে স্মরণ করা নয়; বরং আমাদের ব্যর্থতাও খুঁজে বের করা প্রয়োজন। ১০০ বছর পার হলেও আমরা আরেকজন রোকেয়া তৈরি করতে পারিনি—এটিই দুর্ভাগ্য।

নারী পরিচয় ও সামাজিক অবস্থান নিয়ে সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণে ড. ইউনূস বলেন, মেয়েরা জানে না তাদের নাম কী—সবাই চেনে অমুকের মা, অমুকের স্ত্রী বা মেয়ে হিসেবে। তাদের নিজস্ব পরিচয় সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ারই উদাহরণ। আমরা নাম লেখাতে শেখালাম, কিন্তু রোকেয়ার দেখানো আলোচনার ধারাটি আর ধরে রাখতে পারিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি জানান যে, তার শিক্ষাজীবনে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত কম। এখন শিক্ষায় মেয়েদের উপস্থিতি বৃদ্ধির প্রশংসা করলেও তিনি অবকাঠামোগত বৈষম্য তুলে ধরেন।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হল মাত্র পাঁচটি, ছেলেদের ১৩টি। এটি কেমন বিচার?”—প্রশ্ন রাখেন তিনি।

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের স্মৃতি ও গ্রামীণ ব্যাংকের শুরুর অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষের আঘাত প্রথমে আসে মেয়েদের ওপরে, শিশুদের ওপরেই। নারীদের সেই কঠিন সংগ্রাম আজকের পরিবর্তনের মূলে আছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, যে আদর্শে রোকেয়া আমাদের নিয়ে যেতে চেয়েছেন, আজকের চারজন পুরস্কারপ্রাপ্ত সেই পথেই জাতিকে এগিয়ে দিচ্ছেন। তারা শুধু বাংলাদেশের নয়, আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব দেওয়ার সম্ভাবনাময় নারী।

চূড়ান্ত বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, নারীদের সামনে রেখেই আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। নারী যদি উন্নয়নের কেন্দ্রস্থলে থাকে, জাতি আরও শক্ত অবস্থানে পৌঁছাবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়