News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ৬ জুলাই ২০২৫

আত্মত্যাগের মহিমায় আশুরা

আত্মত্যাগের মহিমায় আশুরা

ছবি: সংগৃহীত

আরবি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মহররমের দশম দিন—আজ পবিত্র আশুরা। মুসলিম ইতিহাসের এক করুণতম অধ্যায় স্মরণে এই দিনটি পরিণত হয়েছে শোক, আত্মত্যাগ ও ন্যায়-প্রতিষ্ঠার চেতনায় উদ্ভাসিত এক মহামানবিক অনুষঙ্গে। 

১৪ শতকেরও বেশি সময় আগে এই দিনেই ফোরাত নদীর তীরে কারবালার তপ্ত প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল এক হৃদয়বিদারক বিপ্লব—যেখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তার পরিবারসহ সঙ্গীরা অন্যায়, নিপীড়ন ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আত্মত্যাগ করেন। সেই আত্মত্যাগ আজও মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে জেগে আছে শোকের আবরণে। তাই আশুরা শুধু শোকের নয়, বরং এটি আদর্শ, সাহসিকতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার অনন্য প্রতীক হয়ে যুগে যুগে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছে।

কারবালার মহান আত্মত্যাগের স্মৃতিতে আশুরার দিনটি মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হয়। 

হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদেরও উৎসাহিত করতেন। বিশেষ করে মহররম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ রোজা রাখা প্রাধান্য পায়, কারণ এতে বিগত বছরের গুনাহ মাফ হয়।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহররম মাসে রোজা ফরজ ছিল; পরবর্তীতে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা ঐচ্ছিক হিসেবে পালিত হয়। তাই এই দিনে মুসলিমরা ইবাদত, দোয়া, মনাজাত ও সমাজকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত হন।

বাংলাদেশে শিয়া ও সুন্নি উভয় সম্প্রদায় আশুরার পবিত্রতা ও তাৎপর্যকে গভীর শ্রদ্ধায় পালন করে আসছে। বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায় তাজিয়া মিছিল ও মহফিলের মাধ্যমে কারবালার ঘটনার স্মরণ করে।

২০২৫ সালে রাজধানী ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশন “পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য” শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। এতে মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মো. মুজির উদ্দিন আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ।

সরকারি ছুটি থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় আয়োজন এবং সামাজিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আশুরার তাজিয়া মিছিল চলাকালে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২ জুলাই এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এতে মিছিলে দা, ছোরা, তলোয়ার, বল্লম, বর্শা, কাঁচি, লাঠিসহ সব ধরনের ধারালো ও বিপজ্জনক অস্ত্র বা বস্তু বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: আশুরায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ

এছাড়া আতশবাজি ও পটকা ফোটানোও নিষিদ্ধ, কারণ এ ধরনের কার্যকলাপ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করে এবং জনসাধারণের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। এই নিষেধাজ্ঞা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর ২৮ ও ২৯ ধারার অধীনে জারি হয়েছে এবং মিছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রযোজ্য থাকবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর বাণীতে কারবালার আত্মত্যাগকে “ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত” আখ্যা দিয়ে বলেন, ইমাম হোসেন (রা.) ও তাঁর সঙ্গীরা অন্যায়, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। আজকের দিনেও তাদের আত্মত্যাগ পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের সাহস এবং সংগ্রামের অনুপ্রেরণা।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে ফ্যাসিবাদ, গণতন্ত্রহীনতা, ভোটাধিকার হরণ, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য কারবালার আদর্শ গ্রহণ অপরিহার্য।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণীতে কারবালার আত্মত্যাগকে মানবতার ইতিহাসে অম্লান ও চিরন্তন বলেন। তিনি বলেন, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় এই ত্যাগ মুসলিম উম্মাহর চেতনায় শক্তি যোগায় এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অনন্য উদাহরণ।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একযোগে আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সমাজে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

পবিত্র আশুরা মুসলিম উম্মাহর জন্য শোকের দিন হওয়া সত্ত্বেও এটি ত্যাগ, সাহস, ন্যায়বিচার ও মানবতা রক্ষার অনন্য প্রতীক। বাংলাদেশে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং সামাজিক ঐক্যের মধ্য দিয়ে দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তা বাহিনী সতর্কতা অবলম্বন করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।

আশুরার চেতনা বর্তমান সময়েও নিপীড়িত, অবিচারগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মূলমন্ত্র হিসেবে প্রাসঙ্গিক রয়েছে। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সাম্য ও শান্তির জন্য আশুরার শিক্ষা যুগ যুগ ধরে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে আসবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়