আশুরায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ
ফাইল ছবি
দেশজুড়ে আগামী ৬ জুলাই (রবিবার) পালিত হবে পবিত্র আশুরা। হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ এই দিনটি মুসলিম বিশ্বের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মরণে এই দিনে রোজা রাখা এবং ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দিনটি পালনের ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে ইসলামে। তবে আশুরা উপলক্ষে কিছু প্রচলিত রীতিনীতিকে ইসলামে নিষিদ্ধ বলা হয়েছে।
আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে নানা আয়োজনে দিনটি পালন করা হয়। কিছু আমল বা রেওয়াজ রয়েছে যেগুলোর কোনো শরিয়তসম্মত ভিত্তি নেই; বরং নিষিদ্ধ সেগুলো হলো-
১. আশুরা উপলক্ষে নিজেদের শরীরকে চাকু, ব্লেড, ছুরি কিংবা লাঠির আঘাতে রক্তাক্তকরণ। এ বছর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাও নিজেদের শরীরকে রক্তাক্ত করার বিষয়টিকে হারাম ফতোয়া দিয়েছেন।
২. আশুরা উপলক্ষে রণ-প্রস্তুতির মহড়া প্রদর্শন;
৩. আশুরা উপলক্ষে আলোকসজ্জা প্রদর্শন;
৪. আশুরা উপলক্ষে মোমবাতি প্রজ্বলন করা।
৫. তাজিয়া মিছিল ও প্রদর্শনী করা।
৬. মর্সিয়া করা।
৭. মহররমে বিয়ে শাদি থেকে বিরত থাকা।
৮. আশুরা উপলক্ষে নির্ধারিত নামাজ ও দোয়া পড়া।
বিশেষ করে
৯. আশুরা উপলক্ষে বিশেষ বরকত পাওয়ার আশায় ঘরে ঘরে হালুয়া-রুটি বিতরণের রুসম-রেওয়াজ পালন করা। অনেকেই গরিব-অসহায়দের খাওয়ানোর দোহাই দিয়ে এটি জায়েজ বা বৈধ করার প্রচেষ্টা চালায়। মূলতঃ তা হয়না বললেই চলে। তবে পারিবারিকভাবে ঘরে ভালো খাবার আয়োজনের ব্যাপারে হাদিসের একটি বর্ণনা রয়েছে।
আশুরার দিনে যথাসাধ্য খাবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করা। যথাসম্ভব ভালো খাবার খাওয়া। হজরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করবে, সে সারা বছর প্রশস্ততায় থাকবে।’ (তাবরানি, মুজামে কবির, বায়হাকি)
তারপরও আশুরা উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি বিশেষ উল্লেখিত রুসুম রেওয়াজগুলো উদযাপন করে থাকেন। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কিংবা কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক এসবের কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।
আরও পড়ুন: হজ শেষে দেশে ফিরলেন ৬৮ হাজার হাজি
রোজা রাখার দিকনির্দেশনা
আশুরা উপলক্ষে রোজা রাখার ব্যাপারে রয়েছে হাদিসের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। তাছাড়া রোজা রাখার দিনক্ষণ সম্পর্কেও রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। আর তাহলো-
১. আশুরার নফল রোজা মহররম মাসের ১০ তারিখ পালন করা সুন্নাত। এ দিন রোজা পালনকারীর বিগত বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় বলে ঘোষণা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
২. সাহাবায়ে কেরাম যখন নবিজিকে জানালেন যে, ইহুদিরাও এ দিন আশুরা উপলক্ষে রোজা পালন করেন। তখন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, তবে আমরা মহররমের নবমীতেও তথা ৯ তারিখও আমরা রোজা রাখব। সে হিসেবে ৯ ও ১০ মহররম রোজা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম।
তবে ইহুদিদের অনুসরণ ও অনুকরণ থেকে নিজের বিরত রাখতে অনেকে নবমীতে রোজা রাখতে না পারলে আশুরার পরের দিন রোজা পালন করে থাকেন। আর তাতে দুইটি রোজা পালন করা হয়।
সেক্ষেত্রে ৯ ও ১০ মহররম রোজা রাখলে হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা পালন হয়ে যায়। আর ৯ তারিখ রোজা রাখতে না পারলে ১০ ও ১১ মহররম রোজা পালনের মাধ্যমে ইহুদিদের অনুসরণ থেকে বিরত থাকা যায়। আর এ কারণে অধিকাংশ ইসলামিক স্কলাররা আশুরার পরের দিন রোজা পালন করাকে বৈধ বলে মত দিয়েছেন। তবে উত্তম হলো ৯ ও ১০ মহররম রোজা পালন করা। কেউ কেউ আবার ৯-১১ মহররম এ তিনদিন রোজা পালনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আশুরায় ইবাদত-বন্দেগি মনে করে রুসুম রেওয়াজ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে নিজেদের বিরত রাখার পাশাপাশি হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। শোহাদায়ে কারবালাসহ আশুরায় ঘটে যাওয়া সব ঘটনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা ও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসবি








