পিআর আমি নিজেই বুঝি না: মির্জা ফখরুল
ছবি: সংগৃহীত
গণভোট ও পিআর ইস্যুতে আন্দোলন না করে নির্বাচন হতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, দেশটাকে বাঁচান, বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। পিআর নিয়ে বিতর্ক সংসদে হবে, রাস্তায় নয়।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গোপালপুর স্কুল মাঠে মতবিনিময় সভায় তিনি অভিযোগ করেন, গণভোট আর পিআর দাবিতে মিছিল করে কিছু মহল নির্বাচন পণ্ড করতে চায়।
সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর আমি নিজেই বুঝি না, দেশটাকে বাঁচান, বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। গণভোট আর পিআর ছাড়া নির্বাচন হবেনা— এসব দাবিদাবা, মিছিল করে তারা নির্বাচনটা পন্ড করতে চায়।
তিনি স্পষ্ট করে জানান, পিআর নিয়ে তর্ক-বিতর্ক পার্লামেন্টে হবে এবং যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত, সেগুলো নিয়ে ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর হবে। বাকী মতের জন্য গণভোট হবে।
তিনি আরও বলেন, দয়া করে নির্বাচনটা দিয়ে এসব অস্তিত্বের সংকট কাটান। হিংসার রাজনীতি চাই না। হিন্দু-মুসলিমের বিভেদ চাই না। সবাই মিলে শান্তিতে থাকতে চাই।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব। বিভাজন আমরা সৃষ্টি করতে চাই না। জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনি নির্বাচিত হবেন। ভাগাভাগি করিয়েন না, দেশটার ক্ষতি করিয়েন না। একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চাই। সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের মধ্যে থাকতে চাই। আমি আপনাদের ছেড়ে যাইনি। ভুলে যাবেন না, মার্কাটা হল ধানের শীষ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিনসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এর আগে ঠাকুরগাঁও জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সদর ও রুহিয়া থানা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বর্ধিত সভায় অংশ নেন মির্জা ফখরুল।
সেখানে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগ হারালে ফ্যাসিস্ট শক্তির ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক ভুলে ফ্যাসিস্টদের কবলে পড়া যাবে না: মির্জা ফখরুল
তিনি সতর্ক করে বলেন, এই উত্তরণের সুযোগ আমাদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। রাজনৈতিক কোনো ভুল পদক্ষেপের কারণে যেন আমরা আবার ফ্যাসিস্টদের নির্যাতনের কবলে না পড়ি।
ভোটের আগে বিভিন্ন দল যেসব দাবিতে আন্দোলন করছে, তাদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে কোনো দাবির সমাধান আগামী নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই করতে হবে। অনেকে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন, সেটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে এসব দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে, সেসব বিষয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। যেসব বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, সেগুলো নিয়ে একটি সনদ প্রকাশ করা হবে, যেখানে সব রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করবে। আর যেসব বিষয়ে একমত হতে পারিনি, তা নির্বাচনের পর পার্লামেন্টে নির্ধারিত হবে এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সেই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
একইদিন দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, নভেম্বরে গণভোটের কথা বলে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, যদি নভেম্বরে গণভোট হয়, তাহলে নির্বাচনের সময় পিছিয়ে যাবে। যারা নভেম্বরে গণভোটের কথা বলছেন, মনে হচ্ছে তাদের অন্য কোনো মাস্টারপ্ল্যান আছে— হয়তো জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রলম্বিত বা ভণ্ডুল করার চেষ্টা চলছে।
রিজভী আরও অভিযোগ করেন, গণভোট ইস্যুকে ঘিরে জামায়াতে ইসলাম একটি পরিকল্পিত বিতর্ক সৃষ্টি করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্র করছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের গণসংযোগে অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছর ঠাকুরগাঁওয়ের বাইরে থাকতে হয়েছে, জেলখানায় থাকতে হয়েছে। ১১ বার জেলে গেছি, সাড়ে তিন বছর কারাগারে ছিলাম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করতেন আমি ভয়ের লোক, তাই কারাগারে যেতে হতো।
তিনি বলেন, জনগণ যে প্রার্থীকে ভোট দেবেন তিনি সংসদে গিয়ে আপনাদের জন্য কথা বলবেন— সেটাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এবারের নির্বাচন একটু ভিন্ন, যেখানে পার্লামেন্টে দুইটা কক্ষ থাকবে— উচ্চ ও নিম্নকক্ষ। নিম্নকক্ষে দল থেকে মনোনীত ও আপনাদের ভোটে নির্বাচিত প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। আর উচ্চকক্ষে যারা প্রতিনিধি হবেন তারা আলেম সমাজের মানুষ, বিজ্ঞ সমাজ, হিন্দু-বৌদ্ধ সবাই থাকবেন সেখানে।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এ সনদে স্বাক্ষর করা হবে। কঠিন শব্দ জনগণ কম বোঝে, তারপরও এটা করা হবে। সবাই যারা একমত হয়েছে তা নিয়ে সনদ হবে। সনদ হচ্ছে, ঘরের নতুন টিন লাগানোর মতো। ঘরের চালে নতুন টিন লাগানো হচ্ছে, দরজায় কব্জা লাগাতে হবে— জং ধরেছে, সংস্কারও তাই।
তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি সংস্কার করতে হবে। সেজন্যই সংস্কার করছি আমরা। সংস্কার প্রস্তাবে যেগুলোতে একমত হয়েছি সেগুলোতে স্বাক্ষর হবে, আর যেগুলো হয়নি সেগুলো জনগণের কাছে যেতে হবে— তাদের সমর্থন লাগবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রত্যেকটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কৃষকদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া হবে।
সব দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আর বিভাজন করবেন না, আর কোনো দাবি তুলে বিভেদ তৈরি করবেন না। গণভোট, পিআর নিয়ে আর আন্দোলন করবেন না। নির্বাচনটা হতে দেন, দেশের মানুষ বাঁচুক। দেশের মানুষকে বাঁচাতে তাড়াতাড়ি ভোট হতে দেন।
তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছেন তাদের উদ্দেশ্যটা ভালো না, তারা ভণ্ডুল করতে চায় নির্বাচনকে। সবাই ভোট দিতে চায়। দয়া করে নির্বাচনটা করতে দেন, নির্বাচিত সংসদ আসুক— পরে এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। হিংসার রাজনীতি করতে চাই না। একটা মানুষও যেন গুলি খেয়ে না মরে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








