তোফায়েল আহমেদের অবস্থা ক্রিটিক্যাল, মৃত্যুর খবর ভিত্তিহীন

ফাইল ছবি
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের শারীরিক অবস্থা ক্রমাগত সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা নিয়ে প্রায় ১০ দিন ধরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এ রাজনীতিক এখনও বেঁচে আছেন।
শনিবার (৪ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে তোফায়েল আহমেদের রক্তচাপ ও পালস হঠাৎ কমে যায়। পরে চিকিৎসকদের তৎপরতায় কিছুটা স্থিতিশীল হলেও তার অবস্থা এখনও ‘ক্রিটিক্যাল’ বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।
তোফায়েল আহমেদের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল খায়ের জানান, স্যারের শারীরিক অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত।
তোফায়েল আহমেদের মেয়ের জামাই, ডা. তৌহিদুজ্জামান শনিবার রাত ১১টার দিকে বলেন, রাত ৮টার দিকে ওনার অবস্থা খারাপের দিকে চলে গিয়েছিল; প্রেশার ও পালস কমে গিয়েছিল। তবে চিকিৎসকদের তৎপরতায় আবার আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। সবমিলিয়ে বলা যায়, ওনার অবস্থা আগের চেয়ে অবনতি হয়েছে। আমরা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করছি, মৃত্যুর গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন এবং তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করুন।
এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফায়েল আহমেদের মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে।
স্কয়ার হাসপাতালের ‘কাস্টমার কেয়ার’ প্রতিনিধি মোরশেদুল ইসলাম শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, তোফায়েল আহমেদের অবস্থা আগের চেয়ে অবনতি হয়েছে, এটা সত্য। তবে তার মৃত্যু সংবাদ ভিত্তিহীন। তিনি আমাদের হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ড সার্বক্ষণিক তার পাশে রয়েছে এবং সম্ভাব্য সব ধরণের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কোন বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটলে অবশ্যই পরিবার এবং সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হবে।
আরও পড়ুন: সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন আর নেই
তোফায়েল আহমেদ দীর্ঘ সময় ধরে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করছেন। স্ট্রোকের কারণে তার শরীরের একাংশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে। তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
তোফায়েল আহমেদ ১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর ভোলা জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকাবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
১৯৬৮-৬৯ সালের উত্তাল সময়ে তোফায়েল ছিলেন ডাকসুর ভিপি এবং সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিব বাহিনীর অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন ছিলেন।
১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ওই বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভার আয়োজন করে, যেখানে লাখো জনতার সামনে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়ার ঘোষণা দেন তোফায়েল আহমেদ।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে ৯ বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘদিন তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। বর্তমানে তিনি দলের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার অবদান সুপরিচিত। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় রাজনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে শেখ হাসিনা তাকে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। পরবর্তীভাবে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আবারও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
তোফায়েল আহমেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো ও মৃত্যুর খবরে পরিবার এবং স্বজনেরা গভীরভাবে আহত হয়েছেন।
পরিবার জানিয়েছে, কোনো গুরুতর পরিবর্তন হলে তারা সরাসরি সংবাদ মাধ্যমে জানাবেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি