আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না নির্ধারণ করবে জনগণ: ডা. জাহিদ
ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ অতীতের অপরাধ, গুম-খুন, জুলুম-অত্যাচার এবং দিনের ভোট রাতে করার মতো কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত কোনো সরকার বা আদালতের নয়—একমাত্র জনগণের।
বুধবার (১ অক্টোবর) রাজধানীতে আলাদা দুই কর্মসূচিতে তিনি এসব বক্তব্য রাখেন। সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এবং পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আজহার শফিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডা. জাহিদ বলেন, বিএনপি সবসময় একটি কথাই বলে এসেছে—যারা গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছে, সেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোন, তার দলের বড় বড় নেতারা হোন, অথবা কর্মী কিংবা অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী—সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গণহত্যাকারী, গণদুশমন, যারা মানুষকে গুম করেছে, নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে, সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচার করেছে—তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। ২০২৪ সালের হত্যাকাণ্ড এবং গত ১৫ বছরের রাতের ভোট, এগুলোর জন্য তাদের অনুশোচনা থাকবে না—এটা হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতেই হবে। তবে ক্ষমা করা বা না করার সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর যে ঐক্য হয়েছে, তা কোনো অবস্থাতেই ভয়ভীতির কারণে হয়নি। যদি আওয়ামী লীগ সত্যিকারের রাজনৈতিক দল হতো, তবে ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়া হতো না। সত্যিকারের রাজনীতিবিদ হলে শেখ হাসিনা মাঠে থেকে রাজনীতি মোকাবিলা করতেন, জেলেও যেতেন। পালিয়ে যাওয়া নিজের প্রতি করা অন্যায়ের প্রমাণ।
আরও পড়ুন: প্রহসনের মাধ্যমে স্বৈরাচার পুনর্বাসিত হচ্ছে: ডা. জাহিদ
বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে ডা. জাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আইন-আদালত বা সরকার নেবে না। কে রাজনীতিতে থাকবে, কে থাকবে না—তার সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে। বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণের বিচারই চূড়ান্ত।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যতই বলুক না কেন, ২০২৪ সালের গণহত্যা, প্রতিহিংসাপরায়ণ কর্মকাণ্ড কিংবা দিনের ভোট রাতে করা নিয়ে তাদের কোনো অনুশোচনা নেই। জনগণের কাছে তাদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চাই জনগণ যেন নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পান।
প্রবীণদের প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্বের বিষয়েও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১ অক্টোবরকে ‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ বছরে। কিন্তু সরকারি চাকরিতে নির্দিষ্ট বয়স পার হলে কর্মকর্তাদের বলা হয়—আপনাদের আর প্রয়োজন নেই। অথচ দেশের শীর্ষ উপদেষ্টাদের অনেকেই প্রবীণ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সত্তরোর্ধ্ব একজন মানুষকেও চাপাচাপি করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হয়। অথচ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশে প্রবীণদের সম্মান জানিয়ে টিকিট কাটা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এখনো সেই সংস্কৃতি তৈরি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, সমাজের টেকসই উন্নয়নের জন্য তরুণ ও প্রবীণ প্রজন্মের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। আজকের তরুণ একদিন বৃদ্ধ হবেন। প্রবীণরা সমাজের বোঝা নন, বরং সম্মানের সঙ্গে তাঁদের বাঁচতে দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বাজেটে প্রবীণদের জন্য আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে।
আলোচনা সভায় গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








