দেশে বন্ধ হচ্ছে না ব্যবহৃত কোনো মোবাইল ফোন: ফয়েজ তৈয়্যব
ছবি: সংগৃহীত
অবৈধ মোবাইল ফোন আমদানি ও চোরাচালান বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এই উদ্যোগের পর দেশে ব্যবহৃত চলমান হ্যান্ডসেট বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব তার ফেসবুক পোস্টে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে এ আতঙ্ককে ভিত্তিহীন বলে ঘোষণা করেন।
তিনি নিশ্চিত করে জানান, বর্তমানে দেশে যেসব মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে—সেগুলো বৈধভাবে কেনা হোক, অবৈধভাবে কেনা হোক বা বিদেশ থেকে আনা হোক—কোনোটিই বন্ধ হবে না।
তার ভাষায়, আপনার ব্যবহৃত চলমান হ্যান্ডসেট বন্ধ হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কা সম্পূর্ণ ভুল।
ফয়েজ তৈয়্যব জানান, এনইআইআর কেবল নতুনভাবে দেশে প্রবেশ করা অবৈধ আমদানিকৃত ফোনগুলোর উপর কার্যকর হবে। ১৬ ডিসেম্বরের পর অবৈধ আমদানিকারকদের চোরাপথে আনা নতুন হ্যান্ডসেটগুলোই কেবল নেটওয়ার্কে কাজ করতে পারবে না। বিদ্যমান কোনো ফোন বা বিদেশ থেকে ব্যক্তিগত ব্যবহারে আনা ফোনের ওপর এর প্রভাব পড়বে না। তিনি আরও বলেন, শোরুম থেকে সহজেই একটি এসএমএস পাঠিয়ে হ্যান্ডসেট বৈধ বা অবৈধ তা যাচাই করা যাবে, এবং বিদেশ ভ্রমণকারীরা নিজের ব্যবহারের বাইরে অতিরিক্ত একটি ফোন আনতেও পারবেন।
ফয়েজ তৈয়্যব দাবি করেছেন, এনইআইআর ঘোষণার পর অবৈধ আমদানিকারক ও স্মাগলার সিন্ডিকেট বিভিন্ন মার্কেটে বিক্ষোভ, দেশীয় ব্র্যান্ডের শোরুমে হামলা, কর্মচারীদের ওপর হুমকি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক অপপ্রচার শুরু করেছে।
তিনি বলেন, বৈধ বিনিয়োগকারী ও দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে এ উদ্যোগ দাবি করলেও অবৈধ আমদানিকারকরা তা বন্ধ করতে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, এই চক্রের কয়েকজন প্রতিনিধি গত সপ্তাহে তার সঙ্গে দেখা করতে এসে দুই দফা দাবি করেন। তিনি তাদের শর্ত দেন—দেশীয় উৎপাদকদের শোরুমে হামলা ও এনইআইআরবিরোধী কার্যক্রম বন্ধ না করলে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। এরপর তারা আর যোগাযোগ করেনি বলে জানান তিনি। পরদিনই ‘মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ’ নামে ভুঁইফোঁড় একটি সংগঠনের ব্যানারে প্রেস কনফারেন্সের ডাক দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: অজিত দোভালকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ ড. খলিলের
তৈয়্যব দাবি করেন, সংগঠনটি সরকারি রেজিস্ট্রেশনবিহীন এবং ফোন নম্বরটি সেই সাংবাদিকের যার বিরুদ্ধে ‘অবৈধ চক্রের মুখপাত্র’ হিসেবে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে।
একই পোস্টে ফয়েজ তৈয়্যব দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেলকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, এনইআইআরবিরোধী চক্র তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত দেখাতে চাইছে।
তৈয়্যব বলেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তিনি প্রশ্ন তোলেন—একজন সাংবাদিক কীভাবে নিজের ফোন নম্বর ব্যবহার করে ভুয়া টাইটেলধারী হয়ে চোরাচালান সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর হয়ে প্রেস কনফারেন্স ডাকেন? সাংবাদিকতার নৈতিকতার সঙ্গে এটি যায় কি না তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন রাখেন।
একই দিনে আরও একটি বিবৃতিতে ফয়েজ তৈয়্যব জানিয়ে দেন, ক্লোন করা, অবৈধভাবে আমদানি করা এবং চোরাচালানকৃত ফোন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত সরকার দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, একটি আইএমইআই কোডের বিপরীতে লাখ লাখ ফোন তৈরি করে দেশে ঢোকানো হচ্ছে, যা এনইআইআর চালু হলে আর সম্ভব হবে না।
তিনি অবৈধ আমদানি ও ক্লোন ফোনের সঙ্গে যুক্ত সম্ভাব্য অপরাধগুলোর তালিকাও তুলে ধরেন—সিম রেজিস্ট্রেশন ও eKYC জালিয়াতি, জুয়া ও এমএলএম প্রতারণার বাল্ক এসএমএস, এমএফএস জালিয়াতি, অনলাইন স্ক্যামিং, প্রযুক্তিগত রয়্যাল্টি ফাঁকি, লাগেজ পার্টি ও সীমান্ত চোরাচালান, এবং দেশীয় শিল্পের প্রতি ক্ষতিকর ডাম্পিং কার্যক্রম। তার মতে, মোবাইল ব্যাংকিং, টেলিযোগাযোগখাতের শৃঙ্খলা, সাইবার নিরাপত্তা ও আর্থিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব কঠোর পদক্ষেপ অপরিহার্য।
ফয়েজ তৈয়্যব জানান, বৈধ ফোন আমদানির শুল্ক কমানো এবং দেশীয় উৎপাদকদের দামের কাঠামো যৌক্তিক করার বিষয়ে ইতোমধ্যে বিটিআরসি এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করেছে। দ্রুতই এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হবে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে আনা ফোনের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের আগেই দেশে সক্রিয় সব ফোনকে বৈধ স্ট্যাটাস দেওয়া হবে।
তার মতে, ভারতসহ অন্য দেশে যেভাবে গণহারে বিদেশি ফোন ঢুকতে দেওয়া হয় না, বাংলাদেশেও একই নিয়ম প্রতিষ্ঠিত করা হবে। সিম নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন থাকলে এবং ক্লোন না করা ফোন ব্যবহার করলে কোনো ভোক্তারই ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা নেই।
ফয়েজ তৈয়্যব তার পোস্টে বারবার বলেন, অবৈধ আমদানিকারকরা এনইআইআর বাস্তবায়ন বন্ধ করতে বিরাট প্রচারণা চালাচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, মূল ইস্যু হলো—অবৈধ ফোন আমদানিকারকরা এনইআইআর বন্ধ করতে ও বৈধ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই চক্রের অপপ্রচারে কান দেবেন না।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








