জনগণ নির্বাচনমুখী হলে অপরাধ কমবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যেকোনো নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে জনগণ। জনগণ নির্বাচনের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন এবং তারা নির্বাচনমুখী হলে কোনো কিছুই সেটি আটকাতে পারবে না।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর রমনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) হেডকোয়ার্টার্স প্রাঙ্গণে রাজস্ব খাতে কেনা ২০টি নতুন গাড়ি (ডাবল কেবিন পিকআপ) ডিএমপির হাতে হস্তান্তর অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারগণ। পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হস্তান্তরকৃত গাড়িগুলো পরিদর্শন করেন।
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। ধাপে ধাপে তাদের প্রশিক্ষণ চলমান আছে। আমাদের সবার প্রচেষ্টা থাকবে, নির্বাচন যেন অবাধ, নিরাপদ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, অপরাধের সংখ্যা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ধীরে ধীরে কমে আসছে। এর মূল কারণ জনগণ; তারা সচেতন হলে সমাজের ক্ষতিকর কোনো ঘটনা প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, দেশের পুলিশ বাহিনীর জন্য প্রয়োজনের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা কম। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ এবং পরবর্তী ঘটনাগুলোতে বাংলাদেশ পুলিশের ৫২৬টি সরকারি যানবাহন ভস্মীভূত বা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। এর মধ্যে ডাবল কেবিন পিকআপ ২৪১টি, মোটরসাইকেল ২১৭টি এবং অন্যান্য যানবাহন ৬৮টি।
আরও পড়ুন: ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের মন্তব্য অপ্রত্যাশিত’
এ সমস্যার সমাধানে সরকার ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ১৫২টি মোটরসাইকেল ও ৬৬টি অন্যান্য যানবাহনসহ মোট ৪১৮টি যানবাহন সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। নতুন যানবাহন ও সরঞ্জামের মাধ্যমে পুলিশ অতি দ্রুত জনগণের দোরগোড়ায় কার্যকর সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে এবং দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, রাজধানীতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে।
তিনি বলেন, ঝটিকা মিছিল থেকে ২৪৪ জনকে হাতেনাতে ধরার পর এসব কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। জনগণের সহযোগিতা পেলে সব ধরনের অপরাধ কমে আসবে।
তিনি আরও জানান, একটি মহল নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। তারা ঝটিকা মিছিল করছে। তবে জনগণ যখন নির্বাচনী মুডে চলে আসবে, তখন অপরাধ আরও কমে আসবে। কারণ তখন প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। আমাদের লক্ষ্য নির্বাচনের সময় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশে হামলার সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে বলেন, সংখ্যাটা আগে থেকে একটু কমেছে। কিছুদিন আগে নরসিংদীতে পুলিশের ওপর হামলার একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে এটি ধীরে ধীরে কমে আসবে। জনগণ যদি সচেতন হয়, তখন নিজেরাই এসব সমস্যার প্রতিকার করবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের সময় সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব থাকে নির্বাচন কমিশনের, এরপর প্রশাসনের এবং তারপরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে রাজনৈতিক দল এবং জনগণ। জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কোনো কিছুই সেটি আটকাতে পারবে না। জনগণ হলো সবচেয়ে বড় ‘ফ্যাক্টর’। তিনি উল্লেখ করেন, জনগণ ইতিমধ্যেই নির্বাচনের বিষয়ে খুবই সচেতন এবং পাড়া-মহল্লা ও চায়ের দোকানগুলোতে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ২৫টি এখনো ভাড়া করা ভবনে চলছে। এর মধ্যে পাঁচটি থানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে এবং আরও দুটি থানার কাজ শিগগির শুরু হবে। নতুন যানবাহন ক্রয়ের পাশাপাশি পুলিশকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, নতুন গাড়ি ও সরঞ্জামের মাধ্যমে পুলিশ অতি দ্রুত জনগণের সেবা পৌঁছে দিতে পারবে এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি