মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ কমেছে: ডিএমপি কমিশনার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, এনডিসি।
তিনি বলেন, এপ্রিল-মে মাসে যে হারে ছিনতাই ও দিনের বেলায় চাপাতি হামলার ঘটনা ঘটত, তা এখন অনেক কমেছে। বিশেষ করে মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীর চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত’ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি কমিশনার।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রাস্তার আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে কোনো মারণাস্ত্র বা লাঠিপেটা ব্যবহার না করেই। পুলিশের নীতি হলো—নাগরিকদের গায়ে হাত তোলা যাবে না। নাগরিকরা যদি দাবি নিয়ে আসে, তা সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও সমাধানের পথেই সমাধান করা হবে।
কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে জানান, রাজধানীতে কোনো শঙ্কা নেই এবং ঢাকাবাসী স্বাভাবিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে। ওইদিন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাজধানীতে মোতায়েন থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে লোকজন টাকার বিনিময়ে মিছিল করে আসে এবং পরে চলে যায়। এসব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ৫৫২ জনকে অক্টোবর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, হেলমেট ও মাস্ক পরে ভোরবেলায় বা ব্যস্ত সময়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। ককটেল বিস্ফোরণে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ১৩ নভেম্বর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ডিএমপি কমিশনার জানান, কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল ১–১১ নভেম্বরের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এছাড়া গত দুই দিনে ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ দুটি দল ও তাদের অঙ্গ-সংগঠন ১৪টি ঝটিকা মিছিল করেছে।
ডিএমপি কমিশনার ঢাকাবাসীকে সতর্ক করেছেন, অপরিচিত কাউকে আশ্রয় না দেবার এবং নিজের মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন ভাড়া দেয়ার আগে যাচাই-বাছাই করার জন্য।
তিনি বলেন, আপনার ভাড়া দেওয়া যানবাহন কোনো দুর্বৃত্তের হাতে চলে যাচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখবেন। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে জানাতে হবে।
তিনি হুঁশিয়ারি দেন, নাশকতাকারীদের প্রতিহত করবে ঢাকাবাসী।
ডিএমপি কমিশনার জানান, অক্টোবর থেকে বিভিন্ন কার্যক্রমে ৫৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের পদধারী ব্যক্তিদের গ্রেফতার অভিযানও পরিচালিত হয়েছে, যার মধ্যে শেরেবাংলা নগর এলাকায় অভিযান অন্তর্ভুক্ত।
কমিশনার আরও বলেন, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা সম্ভব। যেমন গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় সমিতি উদ্যোগে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, অন্য এলাকাগুলোর বাসিন্দারাও যদি এভাবে উদ্যোগ নেন, তবে নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে।
হাইকোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, মানুষ বিচার পাওয়ার জন্য আদালতে যায়। আমরা কখনোই বিচারপ্রার্থীদের বাধা দিতে চাই না। তবে নির্ধারিত দিনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিক্ষোভ বা আন্দোলনে পুলিশ সংযম দেখিয়েছে এবং কোনো মারণাস্ত্র বা লাঠি ব্যবহার না করেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১৩ নভেম্বর নিয়ে ছড়ানো গুজব ভিত্তিহীন। কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। তবে ঢাকাবাসীর সহযোগিতায় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে কোনো অঘটন ঘটার সম্ভাবনা নেই।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি ১৩ নভেম্বরের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে ভয় ও গুজবের কোনো কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি নাগরিকদের সতর্কতা, যানবাহন নিরাপত্তা এবং অপরিচিত ব্যক্তিকে আশ্রয় না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি সেনা ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েনের মাধ্যমে পুরো রাজধানীকে নিরাপদ রাখার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








