News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

রোম সফর শেষে দেশে ফিরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

রোম সফর শেষে দেশে ফিরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি: সংগৃহীত

ইতালির রোমে দুই দিনের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৮টা ২০ মিনিটে তাকে বহনকারী বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এর আগে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে রোমের ফিউমিসিনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত বার্ষিক ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম-এ অংশ নিতে গত রবিবার (১২ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে রোমে পৌঁছান ড. ইউনূস। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এটিএম রোকেবুল হক।

সফরের প্রধান আকর্ষণ ছিল সোমবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, যেখানে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন ড. ইউনূস। তিনি বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে ছয় দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়।

ওই ভাষণে ড. ইউনূস বৈশ্বিক খাদ্যব্যবস্থা পুনর্গঠন, কৃষি উদ্ভাবন ও স্থানীয় উৎপাদনভিত্তিক অর্থনীতি গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। 

তিনি বলেন, ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে দরকার মানুষের সক্ষমতা, নয় শুধু দান—এটি সামাজিক ব্যবসার শক্তিই দিতে পারে।

দুই দিনের এ সফরে প্রধান উপদেষ্টা রোমে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, জিবুতির প্রধানমন্ত্রী ও রোমের মেয়রের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতা, কৃষি প্রযুক্তি বিনিময়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং সামাজিক ব্যবসা সম্প্রসারণসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন হবে গত ১৬ বছরের মধ্যে প্রথম সুষ্ঠু ভোট: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তায় সামাজিক ব্যবসার আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন উদ্ভাবনের পরীক্ষাগার—আমরা চাই, এই মডেল বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অনুপ্রেরণা হোক।

প্রধান উপদেষ্টার রোম সফরটি ছিল বছরের শেষ প্রান্তিকে তার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সফর। এর আগে তিনি এপ্রিল মাসে কাতার ও ভ্যাটিকান সফর শেষে দেশে ফেরেন। সেই সফরে তিনি পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সেই সময় তিনি পোপ ফ্রান্সিসকে স্মরণ করে বলেছিলেন, পোপ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ মানবিক নেতা।

ভ্যাটিকানে অনুষ্ঠিত ওই সফরে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ক্যাথলিক চার্চের দুই শীর্ষ নেতা—কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসি ও কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাড। তারা পোপের দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদান স্মরণ করে ড. ইউনূসের কাজের প্রশংসা করেন।

এছাড়া রোমে অবস্থানকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী পর্যবেক্ষক কার্ডিনাল তোমাসি, ভ্যাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক দপ্তরের প্রধান কার্ডিনাল কুভাকাড এবং উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও লুবেটকিন।

কার্ডিনাল কুভাকাড সাক্ষাৎকালে জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ক্যাথলিক চার্চের উদ্যোগে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হবে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের শীর্ষ নেতা ও সামাজিক ব্যবসা বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন।

এছাড়া উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বৈশ্বিক বাণিজ্যের বর্তমান অবস্থা এবং লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।

রোম সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব আজ নতুন দিকনির্দেশনার সন্ধানে। সামাজিক ব্যবসা ও মানবকেন্দ্রিক অর্থনীতি এই পরিবর্তনের পথ দেখাতে পারে। বাংলাদেশ সেই আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়