শুরুতেই গুলি চালানোর নির্দেশ শেখ হাসিনার

ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান দমন সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নতুন এক প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার এক ফোনালাপ শোনানো হয়, যেখানে অভিযোগ অনুসারে তিনি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনাল-১-এর তিন সদস্যের বেঞ্চের নেতৃত্বে রয়েছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার। মামলার দ্বিতীয় দিনের যুক্তিতর্কে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
প্রসিকিউশনের দাবি অনুযায়ী, ফোনালাপটি গত বছরের ২৯ জুলাই রেকর্ড করা হয়। কল ধরার সঙ্গে সঙ্গে অপর প্রান্ত থেকে সালাম জানানো হয় ‘স্যার’ সম্বোধনে।
এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ওরা কিন্তু জায়গায় জায়গায় এখন জমায়েত হতে শুরু করেছে। মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং বিভিন্ন জায়গায়। শুরুতেই কিন্তু ইয়ে… করতে হবে, একদম শুরুতেই। ধাওয়া দিলে এরা গলিতে গলিতে থাকবে। এবার আর কোনো কথা নাই। এবার শুরুতেই দিবা।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ফোনালাপের অপর প্রান্তে ছিলেন কর্নেল রাজিব, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি মিলিটারি সেক্রেটারি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন না।
প্রসিকিউটর বলেন, এই নির্দেশনার মাধ্যমে স্পষ্ট যে, সরকারপ্রধান ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে গুলি চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
আরও পড়ুন: `হাসিনার মামলা সরাসরি সম্প্রচারকালে ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা`
যুক্তিতর্কের শুরুতে ট্রাইব্যুনালে ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পটভূমি, সরকারি প্রতিক্রিয়া এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থানের পতনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এছাড়া ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার ভূমিকা, গুম-খুন, ধরপাকড় এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা তথ্য ও প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়।
মামলার অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আরও একজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র ও নাগরিক আন্দোলন দমনকল্পে যেভাবে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞার আওতায় পড়ে।
তাজুল ইসলাম বলেন, রবিবার যুক্তিতর্কের প্রথম দিনে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। গুম-খুন, নারকীয় ঘটনা এবং অন্যান্য তথ্য-প্রমাণ মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তি কর্নেল রাজিব। ফোনালাপে নির্দেশ স্পষ্ট ছিল—শুরুতেই গুলি চালাতে হবে।
যুক্তিতর্ক আগামীকালও চলবে বলে ট্রাইব্যুনাল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাপস-ইনুর সঙ্গে কথোপকথনের কল রেকর্ডও ফাঁস হয়েছিল।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি