News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৪৮, ১৫ জুলাই ২০২৫
আপডেট: ১৭:৫০, ১৫ জুলাই ২০২৫

তারেক-জুবাইদার বিচার নিরপেক্ষ ছিল না: হাইকোর্ট

তারেক-জুবাইদার বিচার নিরপেক্ষ ছিল না: হাইকোর্ট

ফাইল ছবি

দুর্নীতির একটি আলোচিত মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে দেয়া সাজা বাতিল করে হাইকোর্ট সম্প্রতি প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারিক আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ায় গুরুতর অসঙ্গতি ও আইনি ব্যত্যয়ের সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে। 

গত ২৮ মে দেওয়া এই রায়ের ৫২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় ১৪ জুলাই (সোমবার), যেখানে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক বেঞ্চ বিচারিক আদালতের নিরপেক্ষতা ও কার্যপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, বিচারিক আদালতে মাত্র দুই মাস চার দিনে ৪২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় এবং সাক্ষ্য শেষের আট দিনের মধ্যেই রায় ঘোষণা করা হয়। এ ধরনের দ্রুত বিচার ও রায়প্রক্রিয়া ‘বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়’ এবং একটি পক্ষপাতহীন বিচারব্যবস্থার স্বাভাবিক প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।

বিশেষ করে ডা. জুবাইদা রহমানকে নোটিশ না দিয়ে বিচার পরিচালনা করা, অভিযোগ গঠনে ফৌজদারি কার্যবিধির ২২১ ধারাসহ প্রাসঙ্গিক আইনি বিধান অনুসরণ না করা এবং অভিযোগে ‘স্পষ্ট ত্রুটি’ থাকার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রায়টি বাতিলযোগ্য বলেই বিবেচনা করা হয়।

হাইকোর্ট রায়ে উল্লেখ করেছে, ৪২ জন সাক্ষীর মধ্যে কেবল ১ নম্বর ও ৪২ নম্বর সাক্ষী ছাড়া বাকিরা সবাই জব্দ তালিকার সাক্ষী ছিলেন। কারো সাক্ষ্যে তারেক রহমান বা জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রমাণ মেলেনি।

এছাড়া, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন, ২০০৪-এর ২৬(১) ধারা অনুযায়ী নোটিশ প্রদান না করায় এবং অভিযোগে আইনি কাঠামোর অভাব থাকায় আদালত ডা. জুবাইদা রহমানের সাজা “আইনানুযায়ী টেকে না” বলে উল্লেখ করেন।

এই মামলায় ডা. জুবাইদা রহমান হাইকোর্টে আপিল করলেও তারেক রহমান কোনো আপিল করেননি। তবু হাইকোর্ট রায়ে বলেন, যেহেতু মামলায় এত অসঙ্গতি রয়েছে এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী এ ধরনের মামলায় একাধিক পক্ষ জড়িত থাকলে বিচারপ্রক্রিয়ার ত্রুটির দায় পুরো মামলাকে বাতিলযোগ্য করে তোলে—তাই তারেক রহমানও এই রায়ের আওতায় খালাস প্রাপ্ত হন।

আরও পড়ুন: তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ১৭ জুলাই

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, এই রায় প্রমাণ করেছে, আমরা আইনগতভাবে সঠিক যুক্তি দিয়েছিলাম। এটি শুধু দ্রুত সাক্ষ্য নয়, একটি উদ্দেশ্যমূলক ত্বরিত বিচার ছিল, যেখানে মোমবাতি জ্বালিয়েও সাজা দেওয়া হয়েছে।

২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদক রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি মামলা করে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং তার মাতা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে। 

অভিযোগে বলা হয়, তারা ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

২০০৮ সালের ৩১ মার্চ দুদক অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান তারেক রহমানকে দুদক আইনের ২৬(২) ধারায় তিন বছর ও ২৭(১) ধারায় ছয় বছর, মোট নয় বছরের কারাদণ্ড দেন এবং তিন কোটি টাকা জরিমানা করেন। ডা. জুবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে পাড়ি জমান ডা. জুবাইদা রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২০২৫ সালের ৬ মে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনি দেশে ফেরেন। এরপর ১৩ মে হাইকোর্ট ৫৮৭ দিনের আপিল দাখিলের বিলম্ব মার্জনা করে ১৪ মে তার আপিল গ্রহণ করে এবং জামিন মঞ্জুর করে। ২৬ মে শুনানি শেষে ২৮ মে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়।

দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল করিম।

তারেক ও জুবাইদা রহমানের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এস এম শাহজাহান, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূঁইয়া।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়