উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আত্মঘাতী হামলায় ৭ পাকিস্তানি সেনা নিহত

ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তান-আফগান সীমান্তবর্তী উত্তর ওয়াজিরিস্তানে শুক্রবার এক ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় সাতজন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।
নিরাপত্তা সূত্র ও সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির শেষ দিনে এই হামলার ঘটনায় সীমান্ত উত্তেজনা নতুন করে তীব্র হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি সামরিক শিবিরে এই হামলা চালানো হয়। একজন আত্মঘাতী হামলাকারী বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি চালিয়ে ক্যাম্পের সীমানা দেয়ালে আঘাত করলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আরও দুই হামলাকারী ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তারা নিহত হয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ঘটনাস্থলে ছয়জন হামলাকারী নিহত হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি এবং কোনো সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। সেনাবাহিনীও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য দেয়নি।
পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, আফগানিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে সাতজন নিহতের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। এর মধ্যে দুইজন নিরাপত্তা সদস্য ও পাঁচজন সাধারণ নাগরিক।
ঘটনাটি ঘটে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ৪৮ ঘণ্টার অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির শেষ দিনে। স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টায় (গ্রিনিচ মান সময়) যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়। এর সম্প্রসারণ বা নতুন কোনো সমঝোতা সংক্রান্ত ঘোষণা এখনো দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: আবার আফগান সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা, প্রাণহানি ১২
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের ফেডারেল মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দায়িত্ব এখন আফগান তালেবান সরকারের হাতে।
তিনি বলেন, যদি তারা সত্যিই আন্তরিক হয়, তাহলে সামনে এসে টিটিপি জঙ্গিদের দমন করবে। আমরা আলোচনায় প্রস্তুত, কিন্তু যুদ্ধবিরতি সময় কেনার কৌশলে পরিণত হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
শাহবাজ শরিফ আরও দাবি করেন, সাম্প্রতিক হামলাগুলোর পেছনে ভারতের প্রত্যক্ষ প্রভাব থাকতে পারে।
তার ভাষায়, আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ভারত সফরে ছিলেন, তখনই পাকিস্তানে হামলা চালানো হয়—এটা নিছক কাকতাল নয়।
অন্যদিকে আফগান তালেবান প্রশাসন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, পাকিস্তানই সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে এবং আইএস–সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে।
চলমান সংঘাত প্রশমনে সৌদি আরব ও কাতার মধ্যস্থতা করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
২০২১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতায় এলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যায়। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে যে আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সীমান্তে হামলা চালাচ্ছে। অন্যদিকে কাবুল দাবি করছে, পাকিস্তান নিজেই সীমান্ত উত্তেজনা সৃষ্টি করে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বাড়াচ্ছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে টানা সংঘর্ষ, গোলাবর্ষণ ও বোমা হামলায় দুই দেশের বহু সেনা ও বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। শুক্রবারের আত্মঘাতী হামলা সেই সহিংসতার সর্বশেষ ও সবচেয়ে প্রাণঘাতী উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধবিরতির শেষ দিনে এমন হামলা দুই দেশের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। সীমান্তে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান জোরদার করা এবং আফগান তালেবান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
তারা সতর্ক করেছেন, দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ না নিলে সীমান্ত উত্তেজনা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
সূত্র: রয়টার্স, এপি নিউজ, ডন, আরব নিউজ, টিআরটি ওয়ার্ল্ড
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি