News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
আপডেট: ১৫:১৩, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

আবার আফগান সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা, প্রাণহানি ১২

আবার আফগান সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা, প্রাণহানি ১২

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘাত ছড়িয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে খাইবার পাখতুনখোয়ার কুররম সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় অন্তত ১২ জন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং আরও ১০০ জন আহত হয়েছেন। 

আফগান তালেবান মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খবর দিয়েছে রয়টার্স।

সংঘাতের সূত্রপাত হয় মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত থেকে কুররম জেলায়। পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অবস্থানগুলোতে আফগান তালেবান ও ফিতনা আল-খারিজ গোষ্ঠী বিনা উসকানিতে গুলি চালায়। পাকিস্তানি সেনারা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাল্টা হামলা চালায়। 

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, এই সংঘর্ষে একাধিক আফগান সীমান্ত পোস্ট ও ট্যাংক ধ্বংস হয়েছে।

পাকিস্তানি সেনা সূত্রে জানা গেছে, সংঘাত শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশের শামশাদ সেনাপোস্ট এবং নার্গসার পোস্ট ধ্বংস করা হয়। শামশাদ পোস্টে থাকা আফগান সেনা ও তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) যোদ্ধাদের মধ্যে কয়েকজন নিহত ও আহত হন। টিকতে না পারায় আফগান সেনারা কিছু জায়গায় সাদা পতাকা উত্তোলন করে আত্মসমর্পণ করার চেষ্টা করেন।

নিরপেক্ষভাবে পাকিস্তানি সূত্রগুলো জানিয়েছে, পাল্টা হামলায় আফগানিস্তানের নার্গসার পোস্টে অন্তত ৪টি ট্যাংক ধ্বংস হয়। একই সময়ে তুর্কমানজাই ও পোলসেন পোস্টও ধ্বংস করা হয়, যেখানে পোলসেন পোস্টের পাশে একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরও ধ্বংস করা হয়েছে। আফগান সেনা ও টিটিপি কমান্ডারের মধ্যে একজন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানের ২শ জনের বেশি সৈন্য ও যোদ্ধা নিহতের দাবি পাকিস্তানের

পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, এই সংঘাতের ফলে আফগান সেনাবাহিনীর চারটি সীমান্ত পোস্ট এবং ছয়টি ট্যাংক ধ্বংস হয়েছে। হামলার সময় টিকতে না পারায় অনেক আফগান সেনা পোস্ট থেকে পালিয়ে গেছেন।

এর আগে, চলতি মাসের ১১ অক্টোবরও আফগান সেনাবাহিনী পাকিস্তানের আঙ্গুর আড্ডা, বাজাউর, কুররম, দির, চিত্রাল ও বারামচা এলাকায় হামলা চালায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীও প্রস্তুত ছিল এবং পাল্টা জবাব দেয়। ওই সংঘর্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৩ জন এবং দুই শতাধিক আফগান সেনা নিহত হওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর)।

পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, আফগানিস্তানে টিটিপি নেতাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে ৯ অক্টোবর কাবুলে বিমান হামলা চালানো হয়, যেখানে টিটিপির প্রধান নূর ওয়ালি মেসুদসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আফগান তালেবান সরকার এই হামলাকে তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে। পাকিস্তানি হামলার জবাবে আফগান সেনারা ১১ অক্টোবর পাল্টা হামলা চালায়।

সংঘাতের পর, পাকিস্তানি সীমান্ত চৌকিতে নতুন করে আক্রমণ হলে আফগান সেনারা পাকিস্তান-সীমান্তে পাল্টা গুলি চালিয়ে অন্তত ১৯টি পোস্ট দখল করে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করেছে, এতে বিপুলসংখ্যক আফগান সেনা ও জঙ্গি নিহত হয়েছেন। 

আফগান সূত্র বলছে, তাদের হামলায় পাকিস্তানের অন্তত ৫৮ সেনা নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রবিবার এক বিবৃতিতে ২৩ সেনা নিহত এবং অন্তত ২০০ তালেবান ও সংশ্লিষ্ট জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে।

কাবুলের স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর চারটায় দক্ষিণ আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের শুরাবাক জেলায় হামলা চালায় পাকিস্তান। এর ফলে কাতার ও ইরানের তত্ত্বাবধানে চলমান অস্ত্রবিরতি কার্যত মাত্র একদিনের মধ্যে ভেঙে পড়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আফগান তালেবান সরকারকে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছে। সম্প্রতি ইসলামাবাদ আফগান সরকারকে ‘সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী’ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হিসেবে উল্লেখ করছে। আফগান সরকার এখনও এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

সংঘাতের ক্রম, নিহত ও আহতের সংখ্যা, ধ্বংস হওয়া পোস্ট ও ট্যাংকসহ সমস্ত তথ্য পাকিস্তানি ও আফগান সূত্র থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়