পাখতুনখোয়ায় টিটিপি-বিরোধী অভিযানে ১৯ জঙ্গিসহ ১১ সেনা নিহত
ছবি: সংগৃহীত
পাখতুনখোয়ার ওরাকজাই জেলার পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ফিতনা আল খাওয়ারিজের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক গোয়েন্দা অভিযানে দুই কর্মকর্তাসহ ১১ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।
অভিযানে তীব্র বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও তাদের মিত্রদের অন্তত ১৯ সদস্য।
বুধবার (৮ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখা আইএসপিআর।
আইএসপিআর জানায়, নিরাপত্তা বাহিনী ভারতীয় মদদপুষ্ট ফিতনা আল খাওয়ারিজ নামক সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির খবর পেয়ে ওরাকজাই জেলায় অভিযান পরিচালনা করে। আমাদের বাহিনীর কার্যকর প্রতিরোধের ফলে ১৯ জন ভারতীয় মদদপুষ্ট খাওয়ারিজকে জাহান্নামে পাঠানো হয়েছে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘ফিতনা আল খাওয়ারিজ’ নামটি টিটিপি ও তাদের মিত্রদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
অভিযান চলাকালে তীব্র গুলি বিনিময়ের সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুনায়েদ তারিক (৩৯), যিনি রাওয়ালপিন্ডি জেলার বাসিন্দা এবং অভিযানে সৈন্যদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তিনি এবং তার সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর তাইয়াব রাহাত (৩৩), একই জেলার বাসিন্দা, বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেন। তাদের সঙ্গে আরও ৯ জন সেনা সদস্য নিহত হন।
আইএসপিআর আরও জানায়, এলাকায় অন্য কোনো ভারতীয় মদদপুষ্ট খাওয়ারিজ পাওয়া গেলে তাদের নির্মূল করতে স্যানিটাইজেশন অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে।
সংস্থাটি যোগ করে, আমাদের সাহসী পুরুষদের আত্মত্যাগ পাকিস্তান থেকে ভারতীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের অভিশাপ দূর করার সংকল্পকে আরও দৃঢ় করেছে।
রাওয়ালপিন্ডির চাকলালা গ্যারিসনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুনায়েদ তারিক এবং মেজর তাইয়াব রাহাতের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং সাধারণ জনগণ।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি অভিযানের সফলতার প্রশংসা করে বলেন, ১৯ জন ভারতীয় মদদপুষ্ট ফিতনা আল খাওয়ারিজ সন্ত্রাসীকে নির্মূল করায় আমি সন্তুষ্ট।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তিকে স্বাগত জানালেন জাতিসংঘ মহাসচিব
শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে অভিহিত করে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং তাদের শক্তি ও ধৈর্যের জন্য প্রার্থনা করেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের সাহসী সৈন্যরা দেশের প্রতিরক্ষায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে চিরন্তন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শহীদদের আত্মত্যাগ জাতীয় ঐক্য ও অটুট সংকল্পের প্রতীক।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, সাহসী সৈন্যদের আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যাবে না। আমরা ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেব। যারা পাকিস্তানের অখণ্ডতার ক্ষতি করতে চায়, তারা সফল হবে না।
তিনি নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের শক্তি ও সহনশীলতার জন্য প্রার্থনা করেন।
অভিযান শেষে ফেরার পথে সেনাবাহিনীর গাড়ি বহর লক্ষ্য করে আফগান সীমান্তবর্তী ওরাকজাই ও কুররাম জেলায় টিটিপি সদস্যরা অতর্কিত গুলি ও বোমা হামলা চালায়। আল জাজিরা ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়কে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণের পর বহু সংখ্যক অস্ত্রধারী জঙ্গি গুলি চালায়। এতে দুই কর্মকর্তাকে বহনকারী একটি গাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় এবং অন্য সেনা সদস্যদের বহনকারী গাড়িও হামলার শিকার হয়।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, টিটিপি সদস্যরা আগে থেকেই ওঁত পেতে ছিল। সেনাবাহিনীর গাড়ি কাছাকাছি আসতেই তারা হামলা চালায়। আইএসপিআর জানায়, সেনা সদস্যরা যে অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন, তাতে টিটিপির ১৯ জন নিহত হয়। ওই অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবেই গাড়ি বহরে হামলা চালায় জঙ্গিরা।
টিটিপি এক বিবৃতিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা জানায়, তাদের যোদ্ধারাই সামরিক বাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাকিস্তান সরকার দাবি করে, এসব হামলাকারী আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং ভারতের অর্থ সহায়তায় পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। তবে কাবুল ও নয়াদিল্লি এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
সূত্র: এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, আল জাজিরা, রয়টার্স
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








