News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:১৩, ১২ আগস্ট ২০২৫

গোপনে ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র বহনে সৌদি জাহাজ

গোপনে ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র বহনে সৌদি জাহাজ

ছবি: সংগৃহীত

ইতালির জেনোয়া বন্দরের কর্মীরা ‘ইসরায়েল’-এর জন্য নির্ধারিত একটি অস্ত্রবাহী জাহাজ আটকে দিয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলনের নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছেন। 

সৌদি আরবের পতাকাবাহী ‘বাহরি ইয়ানবু’ নামের এই জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড থেকে যাত্রা করে জেনোয়া বন্দরে আসে। সেখানে নতুন করে অস্ত্র বোঝাইয়ের প্রস্তুতি চলছিল, যা পরবর্তীতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি হয়ে ‘ইসরায়েল’-এ পাঠানো হওয়ার কথা ছিল।

বন্দরকর্মীরা জানতে পারেন, জাহাজটিতে ইতিমধ্যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহন করা হচ্ছিল যা ‘ইসরায়েল’-এ প্রেরণ করা হবে। এরপর জেনোয়ার ‘অটোনোমাস কালেক্টিভ অব পোর্ট ওয়ার্কার্স’ এবং অন্যান্য ইউনিয়নের প্রায় ৪০ জন কর্মী জাহাজে প্রবেশ করে চালান শনাক্ত করেন। 

ইউনিয়নের মুখপাত্র জোসে নিভোই স্পষ্ট করে বলেন, আমরা যুদ্ধের জন্য কাজ করি না।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বন্দর শ্রমিকরা অস্ত্র পরিবহনের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান কঠোরতর করেছেন। জেনোয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে অস্ত্র চালানের ওপর কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে একটি স্থায়ী পর্যবেক্ষক দল গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জেনোয়া বন্দরে ২০১৯ সালেও বন্দরের কর্মীরা একটি অস্ত্রবাহী জাহাজ আটকে দিয়েছিলেন, যা একই ধরনের প্রতিবাদের অংশ। তবে, গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বন্দরে ‘ইসরায়েল’-গামী অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে বন্দরের কর্মীদের প্রতিবাদ আরও সক্রিয় হয়েছে।

আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ছাড়ালো

গত ৪ জুন ফ্রান্সের ফোস-মার্সেই বন্দরের কর্মীরা ‘ইসরায়েল’-এর জন্য আনা সামরিক সরঞ্জাম একটি জাহাজে তুলতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের প্রতিবাদের মুখে জাহাজটি কোনো অস্ত্র না নিয়েই বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এই ঘটনার পর থেকে পশ্চিম ইউরোপের বন্দরে এমন প্রতিবাদের মাত্রা বাড়তে থাকে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় দখলদার ‘ইসরায়েল’ বর্বর গণহত্যা চালিয়ে আসছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে। গাজায় চলমান এই সংঘাতে ‘ইসরায়েল’-কে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত থাকায় বন্দরের কর্মীরা এই ধরনের অস্ত্র চালান আটকানোর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

এই আন্দোলন কেবল বন্দরের কর্মীদের নিজস্ব অবস্থান নয়, বরং গাজার বিপর্যয় ও মানুষের ওপর অপরিসীম নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক একটি নৈতিক আবেদন হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

দ্য ক্রেডেলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ প্রতিবাদের খবর জানিয়েছে এবং এই ঘটনার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। পাশাপাশি, অন্যান্য দেশের বন্দরে এমন প্রতিবাদের প্রবণতা ও অস্ত্র পরিবহন অবরোধকে ‘নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মানবিক প্রতিবাদের অংশ’ হিসেবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পশ্চিমা বিশ্বের বন্দর শ্রমিকদের এই প্রতিবাদ কেবলমাত্র অস্ত্র পরিবহন বন্ধে সীমাবদ্ধ না থেকে, বৃহত্তর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে একটি নতুন ধরণের শ্রমিক প্রতিরোধ ও নৈতিক আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত হবে।

জেনোয়া বন্দরের কর্তৃপক্ষ অস্ত্র চালান পর্যবেক্ষণে কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, ইউরোপের অন্যান্য বন্দরে এই ধরনের প্রতিবাদ আরও প্রবল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে গাজায় চলমান সংঘাত অব্যাহত থাকায় বন্দরের কর্মীরা নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে পারেন।

বিশ্বব্যাপী শান্তি আন্দোলন ও মানবাধিকার রক্ষায় বন্দরের কর্মীদের এই প্রতিবাদ এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়