আন্দোলনে উত্তপ্ত লস অ্যাঞ্জেলেস, সেনা ও কারফিউ জারি

ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে অভিবাসন আইন কঠোর করার প্রতিবাদে টানা পাঁচদিন ধরে চলা বিক্ষোভ, সহিংসতা ও লুটপাটের পরিপ্রেক্ষিতে শহরের কেন্দ্রস্থলে আংশিক কারফিউ জারি করেছে নগর প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে পরিচালিত অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস মঙ্গলবার (১০ জুন) স্থানীয় সময় রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারির ঘোষণা দেন, যা শহরের ডাউনটাউন এলাকার ১ বর্গমাইল (প্রায় ২.৫৯ বর্গকিলোমিটার) জুড়ে কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, ২৩টি ব্যবসা লুট হয়েছে। আমরা এখন এক চরম পর্যায়ে পৌঁছেছি। জননিরাপত্তা রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত জরুরি।
কারফিউ চলাকালে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির লোকজন—যেমন গৃহহীন, জরুরি বিভাগের কর্মী, চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত ও কাজ থেকে ফিরছেন বা কাজে যাচ্ছেন—কারফিউমুক্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগের প্রধান জিম ম্যাকডোনেল।
গত চার দিনে লস অ্যাঞ্জেলেসে মোট ৩৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে মঙ্গলবার একদিনেই অন্তত ২০০ জনকে আটক করা হয়।
পুলিশ প্রধান জিম ম্যাকডোনেল বলেন, শনিবার থেকে আমরা বেআইনি ও বিপজ্জনক আচরণে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করছি। নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় এই কারফিউ অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: তৃতীয় দিনেও থামেনি আগুন, উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস
প্রতিবাদ বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিমধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ডের চার হাজার সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া মঙ্গলবার শহরে মার্কিন মেরিনা সেনাদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে “অপ্রয়োজনীয়, অবৈধ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছেন। এক ভাষণে তিনি আমেরিকান নাগরিকদের ‘ট্রাম্পের মুখোমুখি দাঁড়াতে’ আহ্বান জানান।
প্রাথমিকভাবে লস অ্যাঞ্জেলেসে শুরু হলেও এই বিক্ষোভ এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভ চতুর্থ দিনে প্রবেশ করার সময় বোস্টন, হিউস্টন এবং ফিলাডেলফিয়াসহ একাধিক শহরে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের ওপর কংক্রিট ও বোতল নিক্ষেপের অভিযোগে অনেক সমাবেশকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করা হয়।
অস্থিরতার মধ্যে শহরের বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের সহায়ক ওয়েমোর স্বচালিত গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নগর সরকার বাসিন্দাদের মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে কারফিউর তথ্য জানায় এবং সতর্ক করে।
বার্তায় বলা হয়, লস অ্যাঞ্জেলেস শহর ঘোষণা করছে যে রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত একটি কারফিউ বলবৎ থাকবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি