ফেডারেল রায়ের পরদিনেই ট্রাম্পের শুল্ক পুনর্বহাল

ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে একটি ফেডারেল আদালতের রায়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত শুল্কনীতি অবৈধ ঘোষণার মাত্র ২৪ ঘণ্টা পরই তা পুনর্বহাল করেছে দেশটির আপিল আদালত। এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত পণ্যে বাড়তি শুল্ক বহাল থাকছে এবং বৈশ্বিক বাজারে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বুধবার (২৮ মে) যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত এক রায়ে বলেন, ট্রাম্প ১৯৭৭ সালের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট (IEEPA)’ এর অপব্যবহার করে তার সাংবিধানিক ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছেন।
আদালতের মতে, আইইইপিএ আইন মূলত নির্দিষ্ট দেশ বা সংগঠনের বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপে ব্যবহৃত হলেও, বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের জন্য এটি উপযুক্ত নয়। ফলে, ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে আদালত অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করেন।
তবে, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) হোয়াইট হাউজের আপিলের প্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের ফেডারেল সার্কিট কোর্ট অব আপিলস জরুরি ভিত্তিতে ওই স্থগিতাদেশ স্থগিত করে। আপিল আদালত জানায়, স্থগিতাদেশ আপাতত কার্যকর হবে না এবং মামলার বাদী পক্ষকে ৫ জুনের মধ্যে ও ট্রাম্প প্রশাসনকে ৯ জুনের মধ্যে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে, শুল্ক স্থগিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এ যুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে আপিল আদালত সাময়িকভাবে শুল্ক বহাল রাখার আদেশ দিয়েছে। হোয়াইট হাউজ এই আদেশকে স্বাগত জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্টের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেন, যদি কোনো শুল্ক মামলায় হেরে যাই, তবে বিকল্প পথ খুঁজে নেব।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিত
বুধবার আদালতের রায়ের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসদাক, নিক্কি, সাংহাই, হংকং ও ভারতের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান দেখা যায়। কিন্তু পরদিনই আপিল আদালতের আদেশে শুল্ক পুনর্বহাল হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, যার প্রভাব পড়েছে বিশ্ব পুঁজিবাজারে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট শুল্ক আরোপ করতে পারেন, তবে তা করতে হবে ১৯৬২ সালের ‘ট্রেড এক্সপানসন অ্যাক্ট’ অনুসরণ করে, যেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত একটি নিরীক্ষার ভিত্তিতে শুল্ক বসানো যেতে পারে।
সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রুস ফেইন বলেন, আইইইপিএতে শুল্ক আরোপের কোনো ধারা নেই। এটি স্পষ্টভাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত করতে প্রণীত আইন।
জর্জটাউন ল স্কুলের আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ গ্রেগ শ্যাফার মন্তব্য করেন, ট্রাম্প গোটা বিশ্বের ওপর নতুন শুল্কনীতি চাপাতে চাইছেন এমন একটি আইনের মাধ্যমে, যা তার সেই ক্ষমতা দেয়ই না।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্কনীতি ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে, ভোক্তা আস্থা কমিয়েছে এবং দেশের ক্রেডিট রেটিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছে একাধিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক সংস্থা।
কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর ফেলো পিটার হ্যারেল বলেন, যদি আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে, তাহলে আমদানিকারকদের দেওয়া অতিরিক্ত শুল্ক ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, যদিও আপিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই ফেরত আটকে রাখা হবে।
ফেডারেল আদালত বনাম প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ে আইনি দ্বন্দ্ব আপাতত চলমান। যদিও আপাতত শুল্ক বহাল থাকছে, তবে চূড়ান্ত রায়ের আগ পর্যন্ত মার্কিন বাণিজ্যনীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা অব্যাহত থাকতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি