News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ২৬ মে ২০২৫

সৌদিতে ৭৩ বছরের মদ নিষেধাজ্ঞার অবসান

সৌদিতে ৭৩ বছরের মদ নিষেধাজ্ঞার অবসান

ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মদের উপর দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে শিথিল করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। ১৯৫২ সাল থেকে দেশটিতে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ থাকলেও, ২০২৬ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৬০০টি নির্দিষ্ট পর্যটন এলাকায় মদের বিক্রি ও সেবনের অনুমতি দেওয়া হবে। 

এই সিদ্ধান্ত দেশটির ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার অংশ, যার মাধ্যমে সৌদি সরকার আন্তর্জাতিক পর্যটন বাড়ানো, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নিয়েছে।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, শুধুমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত পাঁচ তারকা হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট, কূটনৈতিক এলাকা এবং অভিজাত পর্যটন প্রকল্প — যেমন নিওম, সিন্দালাহ দ্বীপ ও রেড সি প্রজেক্ট — এসব স্থানে ওয়াইন, বিয়ার ও সাইডার বিক্রি করা যাবে। তবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থান, দোকান, বাড়ি কিংবা ফ্যান জোনে মদ্যপান নিষিদ্ধই থাকবে।

সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এই নীতিগত পরিবর্তন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট দর্শনার্থী ও আন্তর্জাতিক অতিথিদের জন্য সীমিত পরিবেশে অনুমতি দেবে, যেখানে অপব্যবহার রোধে থাকবে কঠোর নজরদারি। ২০% এর বেশি অ্যালকোহলযুক্ত স্পিরিট ও হার্ড লিকার এখনো নিষিদ্ধ থাকবে।

এই পদক্ষেপের অন্যতম পেছনের প্রেরণা হলো — ২০৩০ সালের এক্সপো এবং ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি। সৌদি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এমন বৈশ্বিক আয়োজন সফল করতে আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের জন্য ‘সীমিত অথচ স্বাগত’ পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।

দেশটির উপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন বন্দর আল সৌদ আগেই জানিয়েছেন, সৌদি আরব তাদের সাংস্কৃতিক সীমারেখার মধ্যেই থাকবে, তবে যারা দেশটিতে আসবে, তাদেরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকবে। 

আরও পড়ুন: গাজায় স্কুলে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত ১৯

তিনি বলেন, এটি আমাদের সংস্কৃতি নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক উৎসব এবং আমরা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই অংশগ্রহণ করতে চাই।

মদ বিক্রির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত কর্মী, পরিচালনাগত নিয়মাবলী এবং ইসলামি মূল্যবোধ সংরক্ষণে জোর দেওয়া হবে। সৌদি সরকার স্পষ্ট করেছে যে, সংস্কারের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সৌদি অভ্যন্তরীণ মহলের মতে, এই সিদ্ধান্ত পার্টি ও বিনোদনপ্রিয় পশ্চিমা দর্শকদের আকৃষ্ট করলেও, মূল লক্ষ্য হলো দেশকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে ‘প্রগতিশীল কিন্তু সম্মানজনক’ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

এই উদ্যোগটি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মতো পর্যটন-বান্ধব দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার এক কৌশল। দেশগুলোর উদাহরণ অনুসরণ করে সৌদি সরকার একটি নিয়ন্ত্রিত, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল অ্যালকোহল পরিবেশ তৈরি করতে চায়, যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিকতা সমান্তরালে চলতে পারে।

সৌদি সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিক্রয় কেবলমাত্র নির্দিষ্ট, লাইসেন্সধারী পরিবেশে হবে। অ্যালকোহল ব্যবহারে দায়িত্বশীলতা এবং সম্মান নিশ্চিত করাই হবে প্রধান লক্ষ্য।

এই নতুন নীতি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে সৌদি আরবের সমাজে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। তবে এখনো দেশটির রক্ষণশীল শিকড় অটুট রাখতে এবং বৈশ্বিক পর্যটনের দাবি মেটাতে কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করে, সেটিই দেখার বিষয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়