জেন-জি বিক্ষোভে সামরিক বিমানে পালালেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট
ছবি: সংগৃহীত
মাদাগাস্কারে জেন-জি প্রজন্মের নেতৃত্বে চলা রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) রয়টার্স ও ফরাসি রেডিও আরএফআইসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা সিতেনি র্যান্ড্রিয়ানাসোলোনিয়িকো বলেন, আমরা প্রেসিডেন্সির কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা নিশ্চিত করেছে, প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে গেছেন।
বিরোধীদলীয় নেতা জানান, সেনাবাহিনীর কিছু ইউনিট বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর রোববার (১২ অক্টোবর) রাজোয়েলিনা দেশ ত্যাগ করেন। একই দিন তার অবস্থান অজানা হয়ে যায়।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আগে জানিয়েছিল, রাজোয়েলিনা সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। কিন্তু ঘোষিত সময়ে কোনো ভাষণ সম্প্রচারিত হয়নি, বরং পরে জানা যায়, তিনি দেশত্যাগ করেছেন।
একটি সামরিক সূত্র রয়টার্সকে জানায়, রাজোয়েলিনা রবিবার একটি ফরাসি সামরিক বিমানে করে মাদাগাস্কার ত্যাগ করেন। ফরাসি রেডিও আরএফআই-এর বরাতে জানা গেছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এক চুক্তির পর তাকে দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, মাদাগাস্কারের সেন্ট মেরি বিমানবন্দরে একটি ফরাসি সেনা বিমান অবতরণের পরপরই একটি হেলিকপ্টার এসে রাজোয়েলিনাকে সেই বিমানে স্থানান্তর করে নেয়।
রবিবার দেশত্যাগের কয়েক ঘণ্টা আগে রাজোয়েলিনা সতর্ক করে বলেন, দেশটিতে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে।
তার এই বক্তব্য আসে ক্যাপস্যাট নামে সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ এলিট ইউনিটের সমর্থন হারানোর পর। এই ইউনিটটিই ২০০৯ সালের অভ্যুত্থানে রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন স্বীকৃতির দাবিতে ট্রাম্পের ভাষণে হট্টগোল
সপ্তাহান্তে ক্যাপস্যাট ঘোষণা করে, তারা সেনাবাহিনীর দায়িত্বভার গ্রহণ করছে এবং নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ দিয়েছে।
বিক্ষোভে যোগ দেওয়া আধাসামরিক জেন্ডারমেরি বাহিনীর একটি অংশও সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেয়। রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ওই অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সেনেটের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভের ব্যাপক ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সেনেটের সভাপতি পদ থেকেও তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুনভাবে জ্যাঁ আন্দ্রে ন্দ্রেমাঞ্জারিকে অস্থায়ী সেনেট সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মাদাগাস্কারের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে যতদিন না নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেনেটের সভাপতি অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
মাদাগাস্কারের এই সংকটের সূত্রপাত ২৫ সেপ্টেম্বর, যখন রাজধানী আন্তানানারিভোসহ বিভিন্ন অঞ্চলে খাবার পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই তা রূপ নেয় দুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও মৌলিক সেবার অভাবের বিরুদ্ধে এক বৃহত্তর গণআন্দোলনে।
বিক্ষোভের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উঠে এসেছে দেশের তরুণ প্রজন্ম—বিশেষ করে জেন-জি শ্রেণির হাজারো আন্দোলনকারী। তারা শুধু মৌলিক পরিষেবার উন্নয়নই নয়, প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার পদত্যাগের দাবিও জানায়।
ফরাসি সরকারের পক্ষ থেকে রাজোয়েলিনার দেশত্যাগ বা আশ্রয় বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কূটনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, ফ্রান্স ও মাদাগাস্কারের মধ্যে একটি ‘নিরাপদ প্রস্থান চুক্তি’ হয়েছে, যাতে রক্তপাত আরও না বাড়ে।
রাজোয়েলিনার অনুপস্থিতিতে এখন দেশটির ক্ষমতার ভার পড়ে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ আন্দ্রে ন্দ্রেমাঞ্জারির ওপর। তিনি দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র: রয়টার্স, আরএফআই, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








