ওয়াশিংটন বৈঠকের আগে ইউক্রেনে রুশ হামলা, নিহত ১০
ছবি: সংগৃহীত
ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেনে ভয়াবহ রুশ হামলা চালানো হয়েছে। এতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু ও কিশোরও রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইচ্ছাকৃতভাবে এ হামলা চালিয়েছেন কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ‘অপমান’ করার জন্য।
খারকিভ শহরে রাতে ড্রোন হামলায় একটি পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। নিহতদের মধ্যে রয়েছে এক বছরের শিশু ও তার ১৬ বছর বয়সী ভাই। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ঘটনায় অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন।
অপরদিকে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জাপোরিঝঝিয়া শহরে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলায় তিনজন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হন। এছাড়া সুমি ও ওডেসাসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে একযোগে হামলা হয়েছে। ওডেসায় আজারবাইজানি রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সোকারের ডিপোতে ড্রোন হামলা হয়, যা আন্তর্জাতিক জ্বালানি নিরাপত্তার জন্যও হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাতে মোট ১৪০টি ড্রোন ও কয়েকটি মিসাইল নিক্ষেপ করে রাশিয়া, যার মধ্যে ৮৮টি ড্রোন ভূপাতিত করা সম্ভব হয়েছে। এটি চলতি মাসে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা।
জেলেনস্কি এসব হামলাকে “নৃশংস ও প্রদর্শনমূলক হত্যাযজ্ঞ” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এক্স-এ দেওয়া বার্তায় তিনি লিখেছেন, পুতিন ইউক্রেন ও ইউরোপের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এবং শান্তি আলোচনাকে অপমানিত করতে এই হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছেন।
রাশিয়া এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি, যদিও অতীতে তারা দাবি করেছে যে, বেসামরিকদের লক্ষ্য করে তারা হামলা চালায় না।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার (১৮ আগস্ট) ওয়াশিংটনে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসে। দুপুর সোয়া একটায় (স্থানীয় সময়) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে ওভাল অফিসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ বন্ধে ক্রিমিয়া ও ন্যাটো ত্যাগ করতে হবে ইউক্রেনকে
বিকেল তিনটায় বহুপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লিয়েন ও ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে। বৈঠকের লক্ষ্য ছিল—ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা ও ইউরোপীয় ঐক্য প্রদর্শন।
গত ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠকের পুনরাবৃত্তি এড়াতে এবং শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা হিসেবেই এবার বৈঠকের আয়োজন করা হয়। তবে আলোচনায় মূল মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধবিরতি নয় বরং একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তিই তার লক্ষ্য। তিনি জানিয়ে দেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ কিংবা ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়া ফেরত পাওয়ার দাবি আলোচনার অংশ নয়। আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বৈঠকের পর থেকে ট্রাম্প রাশিয়ার অবস্থানের সঙ্গে প্রায় মিল রেখেই এই প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি আরও দাবি করেন, জেলেনস্কি ছাড় দিলে “যুদ্ধ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যাবে।”
অন্যদিকে জেলেনস্কি সংবিধানের দোহাই দিয়ে ভূখণ্ড বিনিময়ের প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি ছাড়া কোনও আলোচনায় যাওয়া সম্ভব নয় এবং ভবিষ্যতে আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টি অপরিহার্য। তার দাবি—ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর মতো প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা দিতে হবে।
ইউরোপীয় নেতারাও জোর দিয়ে বলেন, শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের ভূখণ্ড বা সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনও চুক্তি হলে তাতে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকতে হবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেন, শান্তি ইউক্রেনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। শর্তগুলো অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত হতে হবে।
ওয়াশিংটনের এ বৈঠক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করছে। একদিকে ট্রাম্প ভূখণ্ডগত ছাড় দিয়ে দ্রুত শান্তির প্রস্তাব দিচ্ছেন, অন্যদিকে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ও শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া কোনও সমঝোতা মানতে রাজি নন। যুদ্ধ চলমান থাকা অবস্থায় এই দ্বন্দ্বপূর্ণ অবস্থান শান্তি প্রতিষ্ঠার পথকে আরও জটিল করে তুলছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








