News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৩৩, ১৮ আগস্ট ২০২৫

যুদ্ধ বন্ধে ক্রিমিয়া ও ন্যাটো ত্যাগ করতে হবে ইউক্রেনকে

যুদ্ধ বন্ধে ক্রিমিয়া ও ন্যাটো ত্যাগ করতে হবে ইউক্রেনকে

ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আবারও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

রবিবার (১৭ আগস্ট) রাতে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ তিনি লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তের মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন। 

তবে শর্ত হিসেবে ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া ফেরত পাওয়ার আশা ছাড়তে হবে এবং ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন পরিত্যাগ করতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবের প্রধান দিকগুলো হলো:

  • ক্রিমিয়া উপদ্বীপ: ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। ট্রাম্পের মতে, এই অঞ্চলটি ইউক্রেন আর কখনোই ফিরে পাবে না এবং ইউক্রেনকে এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।
  • ন্যাটো সদস্যপদ: ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে। এটি রাশিয়ার সঙ্গে স্থায়ী শান্তিচুক্তির একটি অপরিহার্য শর্ত।
  • ভূখণ্ড বিনিময়: দ্য গার্ডিয়ানের সূত্র অনুযায়ী, আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টার বৈঠকে পুতিন দনবাস অঞ্চলের পুরো দোনেৎস্ক প্রদেশ দাবি করেছেন। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, দোনেৎস্কের মতো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছেড়ে দিলে শান্তিচুক্তি সম্ভব হতে পারে।

ট্রাম্প তার পোস্টে আরও লেখেন, মনে রাখবেন, কিভাবে এটা শুরু হয়েছিল। ১২ বছর আগে একটি গুলি না চালিয়েই ক্রিমিয়া দিয়ে দিয়েছিলেন ওবামা। সেটা আর ফেরত পাওয়া যাবে না, আর ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়াও সম্ভব নয়। কিছু জিনিস কখনোই বদলায় না!

সোমবার (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা। তার কয়েক ঘণ্টা আগে এ ধরনের বার্তা দিয়ে কার্যত আলোচনার প্রেক্ষাপট পাল্টে দিলেন ট্রাম্প। 

এই বৈঠকে শুধু জেলেনস্কি নন, একসঙ্গে হাজির হচ্ছেন ইউরোপের প্রভাবশালী নেতারা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন এবং ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে ওয়াশিংটনে উপস্থিত হয়েছেন। স্বল্প নোটিশে এত বিপুলসংখ্যক ইউরোপীয় নেতার যুক্তরাষ্ট্রে একত্র হওয়া সাম্প্রতিক কূটনৈতিক ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

এর আগে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টার বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পরিবর্তে তিনি স্থায়ী শান্তিচুক্তির ওপর জোর দেন। 

পশ্চিমা সূত্র জানিয়েছে, আলোচনায় পুতিন ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল দখলের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

আরও পড়ুন: যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা: ট্রাম্প

ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পুতিন ইউক্রেনের জন্য একটি “শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তায়” সম্মতি দিয়েছেন। এই নিশ্চয়তাটি ন্যাটোর অনুচ্ছেদ-৫ এর মতো হতে পারে, যেখানে যেকোনো সদস্য রাষ্ট্রের ওপর হামলাকে সবার ওপর হামলা হিসেবে ধরা হয়।

উইটকফ বলেন, ইউক্রেন সরাসরি ন্যাটোতে যোগ দিতে না পারলেও, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ন্যাটোর অনুচ্ছেদ-৫ এর অনুরূপ একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনকে দিতে পারে। এই সমাধান কার্যকর হবে যদি ইউক্রেন এই বিকল্প ব্যবস্থায় সম্মত হয়। রাশিয়াও কিয়েভের পাশাপাশি মস্কোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছে বলে জানিয়েছেন ভিয়েনায় নিযুক্ত রুশ প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানভ।

দ্য গার্ডিয়ানসহ একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, ট্রাম্পের প্রকাশ্য শর্ত ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। তাদের আশঙ্কা, জেলেনস্কিকে হয়তো কঠিন শর্ত মানতে বাধ্য করার চেষ্টা হতে পারে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এসবকে “মিডিয়ার জল্পনা” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, সংঘাত এত দ্রুত শেষ হবে না, এখনও বড় মতপার্থক্য রয়েছে।

ট্রাম্পের মন্তব্যের পরপরই প্রতিক্রিয়া জানান জেলেনস্কি। 

তিনি বলেন, অতীতে ক্রিমিয়ার মতো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়াই পুতিনকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে। 

তার ভাষায়, আমরা যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে চাই, তবে সেই শান্তি স্থায়ী হতে হবে। 

জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

ট্রাম্পের কঠোর শর্তের পাশাপাশি আলোচনায় একটি ইতিবাচক দিকও উঠে এসেছে। 

আজকের হোয়াইট হাউস বৈঠককে তাই শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনা নয়, বরং এক ধরনের কূটনৈতিক সংকট সম্মেলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। 

তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প জেলেনস্কিকে কঠিন শর্ত মেনে নিতে চাপ দিতে পারেন। 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অবশ্য এই গুজব উড়িয়ে দিয়েছেন এবং বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে এখনও বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

এই বৈঠকের ফলাফল কেবল ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্যই নয়, বরং বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়