ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, চলতি বছরে প্রাণহানি ২১৭

ফাইল ছবি
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন এই দুইজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চলতি বছরে দেশে ডেঙ্গুতে মোট প্রাণহানি দাঁড়াল ২১৭ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নিহত দুইজনই নারী। তাঁদের একজনের বয়স ৬০ বছর এবং অন্যজনের ২৭ বছর। তারা যথাক্রমে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। উভয়েরই মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারাদেশে ৭১৫ জন নতুন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের হাসপাতালগুলোতে (সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে) ভর্তি হয়েছেন সর্বাধিক ১৪২ জন রোগী। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪১ জন ভর্তি হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা হাসপাতালগুলোতে।
চলতি বছর এ পর্যন্ত দেশে ৫১ হাজার ৪০৪ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার ৮১৮ জন, আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৮৬ জন।
বরিশাল বিভাগে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন— ১৪ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে শুধু বরগুনা জেলাতেই ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৫২৯ জন রোগী, যা বিভাগের মোট রোগীর প্রায় অর্ধেক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৬৬৭ জন রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘জন্মসনদ থাকুক বা না থাকুক টিকা থেকে একটি শিশুও যেন বাদ না যায়’
দেশজুড়ে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়, যেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ১০৫ জন। মৃত্যুর সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ, যেখানে মারা গেছেন ৩২ জন।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে সেপ্টেম্বর মাসে এসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ওই মাসে ৭৬ জন রোগী মারা গেছেন, যা বছরের একক মাসে সর্বাধিক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, মার্চে কেউ মারা যাননি। এপ্রিলে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের, মে মাসে ৩ জনের, জুনে ১৯ জনের, জুলাইয়ে ৪১ জনের, আগস্টে ৩৯ জনের, সেপ্টেম্বরে ৭৬ জনের এবং অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সেপ্টেম্বরের পরও ডেঙ্গুর সংক্রমণ হার পুরোপুরি কমে না আসায় অক্টোবরেও মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের যৌথ উদ্যোগের বিকল্প নেই। তিন দিনের বেশি পানি জমে থাকে এমন স্থান— যেমন ফুলের টব, পুরোনো টায়ার, পানির ট্যাংক, ছাদের কোণ, ড্রেন বা নির্মাণাধীন ভবনের খোলা অংশ— নিয়মিত পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি নিজে থেকে কোনো ওষুধ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অধিদপ্তর। পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে রোগী সেবায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের শুরুতে ডেঙ্গু সংক্রমণ তুলনামূলক কম থাকলেও জুনের পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। জুলাই-আগস্টে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠিতে রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, নগরায়ণের বর্ধিত চাপ এবং জনসচেতনতার অভাবের কারণে এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হয়েছে।
তারা মনে করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা ও তদারকি বাড়ানো জরুরি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি