News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:২১, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

‘ফলাফলের ধস, সংকটে শিক্ষা ব্যবস্থা’

‘ফলাফলের ধস, সংকটে শিক্ষা ব্যবস্থা’

ফাইল ছবি

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে দেশজুড়ে বিস্ময় ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গড় পাসের হার নেমে এসেছে ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলাফলের এই নিম্নমুখী প্রবণতা শিক্ষা ব্যবস্থার গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এবারের ফলাফল সবাইকে বিস্মিত করেছে। এতদিন ফলাফল ভালো দেখাতে গিয়ে আমরা শিক্ষার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। এই ফলাফলের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারে না। আমরা এই ফলাফলকে আত্মসমালোচনার সুযোগ হিসেবে দেখছি।

তিনি আরও বলেন, ফলাফল কেন খারাপ হলো তা পর্যালোচনা করে খুঁজে বের করা হবে। এটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়; প্রতিটি ফলাফল একটি পরিবারের গল্প, পরিশ্রমের প্রতিচ্ছবি এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা। যাদের ফল প্রত্যাশামতো হয়নি, আমি তাদের প্রতিও সহানুভূতি জানাই। আমি বিশ্বাস করি, এই মুহূর্তও শেখার অংশ—তোমাদের পরিশ্রম কখনোই বৃথা যায় না।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডসহ মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল একযোগে প্রকাশ করা হয়। এ বছর গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী।

গত বছর এইচএসসিতে গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং জিপিএ–৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে পাসের হার কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ এবং জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, এবারের ফলাফলে বাস্তব চিত্র সামনে এসেছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার টেবিল থেকে দূরে সরে গেছে—এই বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদেরও ভাবতে হবে।

আরও পড়ুন: শিক্ষা উপদেষ্টাকে আইনি নোটিশ

তিনি জানান, সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে ইংরেজি ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে। বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ইংরেজিতে পাসের হার গত বছরের ৭৭ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৫৮ শতাংশে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৩৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৮৮টি।
অন্যদিকে, ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজনও শিক্ষার্থী পাস করেনি, যেখানে গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৫টি।

একই সংবাদ সম্মেলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের তিন দফা দাবির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, বাড়িভাড়া বৃদ্ধিসহ দাবিগুলো নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন, আন্দোলনের আগেই বাজেট পাস হয়ে যাওয়ায় বড় অঙ্কের অর্থ ছাড় করা এখন কঠিন। গত সেপ্টেম্বরে শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এরপর পুনর্বিবেচনার চিঠি পাঠানো হয়।

এইচএসসি ফলাফলের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি নয়, ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা বেছে নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত সহজ নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয়। শিগগিরই ফলাফলের ডেটাভিত্তিক বিশ্লেষণ করা হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় খুব শুরুর দিকেই—প্রাথমিক স্তর থেকেই শেখার ঘাটতি তৈরি হয় এবং সেটি বছরের পর বছর সঞ্চিত হয়। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাইনি। আমরা এমন এক সংস্কৃতি তৈরি করেছি, যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছে—পাশের হারই সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ–৫–এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদণ্ড।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফলাফল ‘ভালো’ দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। এখন সময় এসেছে সেই সংস্কৃতি বদলানোর। আমি চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা আবার বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করুক। শেখাকে সত্যিকারের মূল্যায়ন করাই হবে আমাদের সাফল্যের মানদণ্ড।

চৌধুরী রফিকুল আবরার জানান, প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডকে তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার পৃথক একটি পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হচ্ছে, যারা ডেটাভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে শেখার মূল ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করবেন।

আমাদের উদ্দেশ্য অভিযোগ নয়, সমাধান খোঁজা। আজ যদি সাহস করে বাস্তবতা স্বীকার না করি, তাহলে আগামী প্রজন্মের প্রতি আমরা অন্যায় করব, বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়