উদ্ধার ১২ হাজার ঘনফুট সাদা পাথর নদীতে ফেরত
ছবি: সংগৃহীত
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে উত্তোলন ও চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে সর্ববৃহৎ অভিযানে নেমেছে।
অভিযানে ইতোমধ্যে প্রায় ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে পুনরায় ধলাই নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন জানিয়েছে, চুরি হওয়া সব পাথর ফেরত না আসা পর্যন্ত অভিযান চলবে, আর দায়ীদের শনাক্ত করে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে সিলেট ক্লাবের সম্মুখে যৌথবাহিনী চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। সড়কে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে দেওয়া হয় এবং নদীপথে কয়েকটি পাথরবোঝাই নৌকা জব্দ করা হয়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সমন্বয়ে অভিযানটি চলছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা ও অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ করাই মূল লক্ষ্য। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছি।
অভিযানের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাতের নেতৃত্বে একটি ৫ সদস্যের দল সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেছে।
দুদক জানিয়েছে, লুটপাটে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব ঘটনার পেছনে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গণমাধ্যমে ‘রাতের আধাঁরে শত শত ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সাদা পাথর’ শিরোনামের খবর প্রকাশ হলে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: ভোলাগঞ্জে লুট হওয়া সাদা পাথর উদ্ধারে চলছে দুদকের অভিযান
স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক আশ্রয়ে এই লুটপাট দীর্ঘদিন ধরে চলছে, যা কেবল প্রাকৃতিক সম্পদই নয়, পর্যটন শিল্পকেও বিপর্যস্ত করেছে।
প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট সার্কিট হাউসে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের সমন্বিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সাদা পাথর রক্ষায় পাঁচ দফা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়—
- সাদা পাথর ও জাফলং-ইসিএ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী মোতায়েন।
- গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে স্থায়ী পুলিশ চেকপোস্ট।
- অবৈধ ক্রাশিং মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বন্ধ রাখা।
- পাথর চুরির সঙ্গে যুক্তদের গ্রেফতার ও আইনগত ব্যবস্থা।
- উদ্ধারকৃত পাথর আগের অবস্থানে পুনঃস্থাপন।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে বলেন, চার বছর পরিবেশকর্মী হিসেবে সিলেটে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেরেছি, এখন উপদেষ্টা হয়েও পারলাম না।
তিনি প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও দায়বদ্ধতার অভাবের সমালোচনা করেন। পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন—এ ধরনের লুটপাট রোধে অবিলম্বে আইন প্রয়োগ ও পর্যবেক্ষণ না বাড়ালে সাদা পাথর এলাকা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান সাদা পাথরের লুটপাট কেবল একটি আইনশৃঙ্খলা বিষয় নয়; এটি পরিবেশ, পর্যটন ও জনস্বার্থের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দুদকের এই যৌথ অভিযান যদি ধারাবাহিক ও স্বচ্ছভাবে চালানো হয় এবং জড়িত প্রভাবশালীদের জবাবদিহির আওতায় আনা যায়, তবে ধলাই নদীর তীর ও সাদা পাথর এলাকার সৌন্দর্য পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা। অন্যথায় এই প্রাকৃতিক সম্পদ চিরতরে হারানোর ঝুঁকি থেকেই যাবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








