ঠাকুরগাঁয় পুরনো পদ্ধতিতে পাটজাগ, হুমকির মুখে পরিবেশ
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও জেলার নদী, খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে যত্রতত্র সনাতন পদ্ধতিতে পাটজাগ দেয়ায় পানি পচে তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যেমন পানি পচে পরিবেশ হচ্ছে মারাত্মক দুর্গন্ধময়, তেমনি বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছেরও নিধন হচ্ছে। নদী তীরবর্তী হাজার হাজার মানুষ পচা দুর্গন্ধময় পানি ব্যবহার করে পানিবাহিত নানারোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
কৃষকদের অসচেতনতার কারণে এমনটি ঘটলেও পাট পচানোর রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহারের ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও কৃষি বিভাগের তেমন প্রচারণা নেই। বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে তেমন ভূমিকা নিতে দেখা যায় না। ফলে শত বছরের সেই সনাতন পদ্ধতিতেই পাটজাগ করে আসছেন কৃষকরা। আর প্রতিটি পাট মৌসুমে পরিবেশ পড়ছে মারাত্মক বিপর্যয়ে। অথচ কোনো মাথা ব্যথা নেই কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিন সদর উপজেলা উপজেলার আউলিয়াপুর, ভুল্লী, গড়েয়া, খোচাবাড়ী, রুহিয়া, রায়পুর, আকচা, বিভিন্ন এলাকা ঘুরে টাঙ্গন ও শুক নদীর তীরে যত্রতত্রভাবে ব্যাপকভাবে দেয়া পাটজাগ দেখা গেছে। উন্মুক্ত জলাশয়ের অভাবে বছরের পর বছর ধরে পাট পঁচানোর উদ্দেশে নদী ও পুকুর পাটজাগ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৩শ ৬২ হেক্টর জমিতে। আর পাট চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৬ শ ৪০ হেক্টর।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জমি থেকে পাট গাছ কাটার পর তা সরাসরি পানিতে জাগ দেয়ার পরিবর্তে মেশিনের মাধ্যমে কাঁচা পাটগাছ থেকে আঁশ ছড়িয়ে তা গাঁট বেঁধে মাটিতে গর্ত করে সেগুলো রেখে কিছুটা পানি ও ইউরিয়া প্রয়োগ করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। এভাবে প্রক্রিয়ায় কিছুদিন পর পাটের আঁশ পঁচে যাওয়ার তা ধয়ে শুকাতে হয়। তবে কৃষকরা বলছেন তারা এ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইউনিয়ন পর্যাযে কৃষি বিভাগের নিয়োগকৃত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ রিবন রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের কিছুই জানাননি।
পাট চাষি সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, তারা রিবন রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না। পাট পচানোর বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা নদী-খালে পাট জাগ দিয়েছেন জানালেন তিনি।
আকচা গ্রামের জুলফিকার আলী জানান, নদী-খালে পাটজাগ দেয়ায় মাছের ক্ষতি হচ্ছে এবং এ পানি ব্যবহারের ফলে লোকজনের খোস পাঁচড়া ও চুলকানি হচ্ছে। একই গ্রামের মৎস্যজীবী ভবেষ চন্দ্র বলেন, নদী-খালে পাটজাগ দেয়ার ফলে পানি পঁচে রুই, কাতলা, পুঁটি, শিং, কৈ, মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠছে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত টাঙ্গন, শুক, নাগর, সেনুয়া নদীর আনুমানিক ৩০ কিমি নদীর তীর জুড়ে পাট জাগ দেওয়া হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এর ফলে নদীগুলো প্রায় মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে হাজার হাজার মৎস্যজীবী পরিবার এ পেশা থেকে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আরশেদ আলী জানান, নদী ও খাল বিলে পাট জাগ দেওয়া কৃষকদের দীর্ঘদিনের একটি অভ্যাস। কিন্তু এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের রিবন রেটিং পদ্ধতির ব্যাপারে সচেতন করা হচ্ছে। নতুন পদ্ধতিতে কৃষকদের অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম








