News Bangladesh

লালমনিরহাট সংবাদদাতা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:১২, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

হাতীবান্ধায় মহাসড়ক অবরোধ করে ডিলার ও কৃষি কর্মকর্তার অপসারণ দাবি

হাতীবান্ধায় মহাসড়ক অবরোধ করে ডিলার ও কৃষি কর্মকর্তার অপসারণ দাবি

ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় সারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা। সার না পাওয়ায় দিশেহারা চাষিরা রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার মেডিকেল মোড় গোল চত্বর এলাকায় সার বিক্রয় কেন্দ্র 'মেসার্স ওয়াছেক খান'-এর সামনে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করেন।

লালমনিরহাটের 'ব্র্যান্ডিং পণ্য' ভুট্টার চাষাবাদ মৌসুম শুরু হয়েছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষ হয় হাতীবান্ধা উপজেলায়। কিন্তু চাষের শুরুতেই সার সংকটের খবরে চাষিরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সার না পাওয়ায় গত সপ্তাহেও উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের কৃষকরা মহাসড়ক অবরোধ করে ডিলার ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেছিলেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতির পরেও কাঙ্ক্ষিত সার না পেয়ে কৃষকরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো মহাসড়ক অবরোধে নামেন।

হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে সিন্ধুর্না ইউনিয়নের বিসিআইসি'র পরিবেশক 'মেসার্স ওয়াছেক খান' সার ঘর থেকে সার বিক্রি করা হয়। কয়েক দিন ধরে সার না পেয়ে কৃষকরা হতাশ ছিলেন। বিক্রয়কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, রোববার সকালে সিন্ধুর্না ইউনিয়নের চাষিদের নিকট সার বিক্রি করা হবে। এই প্রচারণায় সকাল থেকে উপজেলার সিন্ধুর্না ইউনিয়নের কৃষকেরা বিক্রয়কেন্দ্রে ভিড় জমান এবং মুহূর্তেই সার ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। তবে কয়েকজন কৃষককে তাদের চাহিদামতো সার দেওয়ার পরই হঠাৎ করে বিক্রয়কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কৃষকদের অভিযোগ, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, তানজিলা আক্তার ও গোবিন্দ কুমারের সহযোগিতায় পরিবেশক সারগুলো খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং পরিবেশক ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানান।

আরও পড়ুন: ৮ কুকুরছানা হত্যা মামলায় জামিন পেলেন নিশি

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা, সিন্ধুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর ইসলাম এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পৌঁছান। প্রায় তিন ঘণ্টা পরে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পর্যাপ্ত সার সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেন।

চর সিন্ধুর্না গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, "১৪ দোন জমির জন্য ইউরিয়া সার দরকার। কয়েক দিন ধরে ঘুরছি তারপরও সার পাইনি। কৃষি অফিসের লোকদের সহযোগিতায় ডিলাররা বাইরে বেশি দামে সার বিক্রি করছে। সার না পেলে ভুট্টার আবাদ নষ্ট হবে।"

অপর কৃষক আফজাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "সারের জন্য বারবার ডিলারের কাছে যাচ্ছি, তবু সার পাই না। খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছে ডিলাররা। এই দুর্নীতি আর চলতে পারে না। ডিলার আর কৃষি কর্মকর্তাদের অপসারণ চাই।"

কৃষক সমশের বলেন, "ভুট্টা খেতে এখনই সার দেওয়ার সময়। আজ কালকের মধ্যে সার না পেলে রোপণ করাই সম্ভব হবে না। আমার মতো অনেক কৃষকই সার পাচ্ছে না। এবারের ভুট্টার আবাদ কি হবে আল্লাহ্ই জানেন।"

মেসার্স ওয়াছেক সার ঘরের স্বত্বাধিকারী মোঃ ওয়াছেক খান মুঠোফোনে জানান, "কৃষি অফিসের লোকজনের উপস্থিতি ছাড়া সার বিক্রি করা হয় না। ছেলেরা আমার ব্যবসা দেখাশোনা করেন। আমি তেমন কিছু জানি না।"

হাতীবান্ধা উপজেলা বীজ সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, "ভুট্টার মৌসুম চলায় সকল কৃষক একই সঙ্গে সার কিনতে আসছেন। যার কারণে মজুদ কম থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে কৃষকরা মজুদ না করে চাহিদা মতো সার কিনলে সমস্যা হতো না। আমরা কৃষক পর্যায়ে কমিটি করেছি। সে কমিটিও কৃষকদের চাহিদা বিবেচনা করে কৃষি অফিসারদের সহায়তা করবে। আশা করি আগামী সপ্তাহে চাহিদা কমে গেলে চাপটাও কমে যাবে।"

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়