ব্লগার হত্যাকাণ্ড
গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম
লক্ষ্মীপুর: রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওয়ে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান মিশু বাবু (২৭) হত্যা ঘটনায় লক্ষ্মীপুরে তার গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের শোকের মাতম চলছে।
পুত্র শোকে পিতা টিপু সুলতান পাথর এবং তার গ্রামবাসী নিস্তব্ধ ও হতবাক হয়ে পড়েছে।
সোমবার বিকালে নিহত ওয়াশিকুর রহমান মিশু বাবুর গ্রাম লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের আবদুল করিম হাজীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহত বাবুকে নিয়ে সবাই যেন শোকে মুহ্যমান। শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে সবাই বাবুর বাড়িতে ভিড় করছে।
এলাকাবাসীর দাবি, ব্লগার রাজীব হায়দার ও অভিজিৎ রায়ের হত্যার প্রতিবাদে সরব থাকায় তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার হিসেবে লেখালেখি যদি অপরাধ না হয়, তার মৃত্যুর জন্য দায়ীরা যেন পার না পায়।
তাদের বক্তব্য, জড়িতদের নিশ্চিত শাস্তির মুখোমুখি করা হলেই বাবুর আত্মা শান্তি ফিরে পাবে।
বাবুর বড় বোন আসরাফী সুলতানা শিমু জানায়, “বিশ বছর আগে আমরা মা হারাই, বাবা আমাদের ভাই-বোন দুজনকে কোলে পিঠে অনেক কষ্টে মানুষ করেন।”
এলাকাবাসী জানায়, ২০০৪ সালে স্থানীয় চণ্ডীপুর চরমনসা উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে এসএসসি পাশ করেই ঢাকায় পড়াশুনার জন্য যায়। ২০১৪ সালে অনার্স শেষ করে বিবিএ পড়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে বাবু।
পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, বাবু পড়ালেখায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি বাবু ‘কুচ্ছিত হাঁসের ছানা’ কিংবা ‘গণ্ডমূর্খ’ নামে লেখালেখি করায় ব্লগে ওয়াশিকুর বাবু নামেই পরিচিত ছিলেন।
জানা যায়, তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা, বড় বোন শিমু ও নিহত বাবুসহ তিনজনকে সাজানো সংসার ছিল তাদের। প্রায় ২০ বছর আগেই মা রেহানা পারভিন মারা যান।
সম্প্রতি বাবার ওপর কিছুটা চাপ কমাতে পড়াশুনা, লেখালেখির পাশাপাশি নিজেও সামান্য বেতনে রাজধানী মতিঝিলের শাপলা চত্বরের পাশে ফারইস্ট অ্যাভিয়েশন এজেন্সিতে ট্রেনার হিসেবে কাজ করছিলেন ছিলেন বলে জানা যায়।
স্থানীয়রা আরও জানায়, অত্যন্ত সৎ, ভদ্র, বিনয়ী এবং আত্মপ্রত্যয়ী এই ব্লগারকে কোনো রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকতে কেউ দেখেনি। কারো সাথে কখনো বিরোধে জড়াতে দেখেনি কেউ। বাজে কোনো অভ্যাসও ছিল না তার। তার কোনো শত্রু থাকতে পারে এমনটা বিশ্বাস করতে পারছেন না গ্রামবাসী।
ব্লগার হিসাবে গণমাধ্যমে তাকে হত্যার কথা শুনে সবাই হতবাক ও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। হত্যাকারীদের প্রতি ক্ষোভে ঘৃণা ও ধিক্কার জানায় সবাই।
শোকাহত বোন শিমুর দাবি, মা হারানোর পর এবার ঘাতকদের থাবায় ভাই হারিয়ে তার অবশিষ্ট আর কিছুই রইল না। ‘কী নিয়ে বাঁচবেন তারা’-এসব কথা বলে শুধুই আহাজারি করছেন তিনি।
সোমবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান মিশুকে(২৭) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
পরে বেগুনবাড়ি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার প্রতিবাদে অত্যন্ত সরব ছিলেন এ ব্লগার। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম নামে দুজনকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানা যায়।
সন্ধ্যায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত এখনো গ্রামের বাড়িতে লাশ পৌঁছায়নি। কখন পৌঁছাবে তাও নিশ্চিত কিছু বলতে পারে না স্বজনরা।
লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা ঢাকায় রওয়ানা হয়েছেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের পিতা টিপু সুলতান।
নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম








