News Bangladesh

সখীপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ৪ নভেম্বর ২০২৫

১৫ বছর ধরে বন্ধী জীবন পার করছেন সোহেল

১৫ বছর ধরে বন্ধী জীবন পার করছেন সোহেল

ছবি: নিউজবাংলাদেশ

১৫ বছর ধরে শুধু শুয়ে আর হুইলচেয়ারে বসেই বন্ধী জীবন পার করছেন ৩৭ বছর বয়সী সোহেল। পা থাকলেও চলার মতো শক্তি নেই তাতে। ২২ বছর বয়সে বিদ্যুৎ এর লাইনে কাজ করার সময়, গাছ থেকে পড়ে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে যায় তার। এখন ঘরের ভেতরেই থাকা, খাওয়া এমনকি প্রসাব পায়খানাও করতে হচ্ছে তাকে। 

ঘটনাটি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের টাঙ্গাইল্যা চালা এলাকার। সোহেলের জীবন যেন এক কষ্টের সিন্দুক। বাবা আব্দুল আজিজ মারা গেছে ছয় বছর আগে। বৃদ্ধ মা রোবিয়া বেগমের দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গেছে। ২১ বছর আগে বোনের স্বামী মারা যাওয়ায়, সেও চলে এসেছে বাবার বাড়িতে। বর্তমানে পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায়, মানবেতর জীবনযাপন করছে সোহেলের পরিবার। 

জীবনের ২২ বছর পার করেছে অন্য দশ জন সাধারণ মানুষের মতোই। একসময় ছিলেন পরিশ্রমী বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় জীবনের প্রতিচ্ছবি পাল্টে যায় সোহেলের। বিয়ের পর সংসারের স্বপ্ন গুছিয়ে নিতে শুরু করেছিলেন মাত্র। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম আঘাতে, সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় মুহুর্তেই। সোহেলের দুর্ঘটনার পর পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করিয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই চিকিৎসায় সুস্থ্য হতে পারেনি সোহেল। এখন কোমরের নিচে থেকে পুরোটাই অবশ। শুয়ে আর বসে থাকতে থাকতে কোমরে ঘাঁ হয়ে গেছে। দুর্ঘটনার ছয় মাস পর আড়াই বছরের সংসার ছেড়ে চলে যায় স্ত্রী ইসমতআরা। স্ত্রী চলে যাওয়ার পর বৃদ্ধ মা আর বড় বোনই সোহেলের সেবা যত্ন করছে। দুই ভাই, তিন বোনের মধ্যে সোহেল সবার ছোট। বড় ভাই প্রবাসে থাকলেও তার অবস্থাও ভাল না। সোহেলের থাকার ঘরটি ঝড়াজীর্ণ হওয়ায় তিন বছর যাবৎ বড় বোন রাবিয়ার দুইচালা ঘরেই মাকে নিয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে সোহেলের থাকার ঘরটিও মেরামত করতে পারছে না। প্রতিমাসে সোহেল আর তার মায়ের চিকিৎসা খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। 

সোহেলের বোন রাবিয়া বলেন, ২১ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ায়, বাবার বাড়িতে চলে আসতে হয়েছে। ১৫ বছর যাবৎ ভাইয়ের সেবা করছেন মা একা। এখন মায়ের কিডনিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন কেউ সাহায্য সহযোগিতা করলে কোনমতে খেয়ে বাঁচতে পারবে বলে জানান তিনি। 

সোহেল বলেন, দুর্ঘটনার ৬ মাস পরই স্ত্রী চলে যায়। এখন মা ছাড়া আর কেউ নেই। মা অসুস্থ থাকার পরও টাকার অভাবে চিকিৎসাও করা হচ্ছে না। থাকার ঘরটি ভেঙে যাওয়ায় মা আর বোনের সাথে একই ঘরে থাকতে হচ্ছে। সুস্থ্য থাকলে স্ত্রীও চলে যেতো না, ঘরের অভাবও হতো না। অশ্রুসিক্ত হয়ে দেশের এবং প্রবাসীদের সাহায্য প্রার্থনা করেন সোহেল।

সোহেলের মা রোবিয়া বেগম বলেন, স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে সেবাযত্ন তিনিই করেন। ঘরে খাবার থাকে না, ঠিকমতো ঔষধ খেতে পারে না মা ছেলে কেউ। মানুষ দিলে খেতে পারে, নয়তো না খেয়েই থাকতে হয়। আগে কাজ কর্ম করে খেলেও, এখন সেই শক্তিও নেই শরীরে। দুই কিডনিই খারাপ হওয়াতে মানুষের কাছে চাইতেও যেতে পারে না। ছেলে সুস্থ্য থাকলে অন্য কারও কাছে চাইতে হতো না। এখন সরকার এবং মানুষের কাছে সাহায্য চায় মা রোবিয়া বেগম।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মনসুর আহমেদ বলেন, সোহেল প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এবং তার মা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছে। তার যেহেতু বাবা নেই এবং পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নেই৷ তাই তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান এবং সরকারিভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুরে প্রেমের ফাঁদে যুবক অপহরণ, নারীসহ গ্রেফতার ৭

সোহেল এখন হাঁটতে না পারলেও মানুষের মতো বাঁচতে চান। তিনবেলা খাবার খাওয়াই যেখানে দুষ্কর, সেখানে চিকিৎসার খরচ জোগাড় করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। স্থানীয়দের দাবি সরকার কিংবা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি সহযোগিতা করে, তাহলে হয়তো ভালভাবে খেয়ে বাঁচতে পারবে পরিবারটি।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এসবি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়