ফেলানীর পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ
কুড়িগ্রাম: ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানীর পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে ভারত সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির মানবাধিকার কমিশন। তবে ফেলানীর বাবা ক্ষতিপূরণ নয়, বিচার চান বলে জানিয়েছেন।
সোমবার সরকারকে এ ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়ার নির্দেশ দেন ভারতীয় মানবাধিকার কমিশন। বিষয়টি নিউজবাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রাম পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. এসএম আব্রাহাম লিংকন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ফেলানীর পরিবারকে এ অর্থ প্রদানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি ক্ষতিপূরণ চান না। তিনি সবার আগে ফেলানী হত্যার বিচার চান।”
বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তা জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে ফেলানী হত্যা মামলার আইনজীবী ও কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. এসএম আব্রাহাম লিংকন আরো বলেন, “ভারতীয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিজস্ব উদ্যোগে তাদের ফুল বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে ফেলানী হত্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “এর মধ্য দিয়ে একটি সত্য প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো যে, বিএসএফের গুলিতে ফেলানী নিহত হয়। এ কারণে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের নির্দেশ তারা দিয়েছে। একইসাথে এর ভিতর দিয়ে আসামির ওপর ফৌজদারী দায় যে যৌক্তিক, তা নতুন করে প্রমাণিত হলো।”
লিংকন বলেন, “আসামি অমিয় ঘোষের কৃতকর্ম যে ফৌজদারি অপরাধে বিচারযোগ্য তা অফিসিয়ালি স্বীকৃতি পেল। এখন আমরা আশা করি, অমিয় ঘোষের প্রকৃত বিচারে যে সাজা ও পাঁচ লাখ রুপী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে তা নামমাত্র। ঘোষিত আর্থিক ক্ষতিপূরণের পরিমান আরো বাড়ালে তা হতো যুক্তিযুক্ত।”
তিনি বলেন, “ফেলানী হত্যা মামলার দু’বার রায়ের পর ফেলানীর বাবা সে রায় মেনে নেননি। প্রকৃত বিচার চেয়ে তিনি বাংলাদেশ আইন ও শালিশী কেন্দ্রের মাধমে ভারতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার আবারও বিচারের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ফেলানীর পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানায় দেশটির মানবাধিকার কমিশন।”
সোমবার দুপুরে ফেলানীর বাবা নূর ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে নিউজবাংলাদেশকে তিনি বলেন, “আমার মেয়েকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ। এ হত্যার বিচার আমি চাই। বিএসএফ কোর্ট দু’বার অমিয় ঘোষকে খালাস দিয়েছে, আমি এ রায় মানিনি। পুনঃবিচারের জন্য আবেদন করেছি। আগে বিচার চাই।”
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফেলানী খাতুন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের আর্ন্তজাতিক সীমানা পিলার নং ৯৪৭ এর কাছে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হয়। এ ঘটনার পর বিএসএফ আদালতে অমিও ঘোষকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠন করা হয়।
দু’বছর আট পর ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অমিয় ঘোষকে নির্দোষ রায় দেন বিএসএফ আদালত। এ রায় যথার্থ নয় বলে জানান বিএসএফ মহাপরিচালক। তিনি এসময় রায় পুর্নবিবেচনার জন্য আদেশ দেন।
এরপর ২০১৫ সালের ২ জুলাই বিএসএফ আদালত অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে পুনরায় রায় দেন। এ রায়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন ফেলানীর বাবা। অথচ অমিয় ঘোষ ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করার কথা আদালতে স্বীকার করেন।
ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চকে (মাসুম) উচ্চ আদালতে মামলাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ করেন ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম নুরু। এরপর মাসুম ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ১৪ জুলাই রিট মামলা দায়ের করে। ২৬ আগস্ট দিল্লির সুপ্রিম কোর্ট এ মামলা শুনানির জন্য ৬ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন।
এরই মধ্যে ভারতীয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিজস্ব উদ্যোগে তাদের ফুল বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে ফেলানী হত্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এটিএস/এজে
নিউজবাংলাদেশ.কম








