News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:১৮, ৩০ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ১৮:২৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

রানার সম্পাদক হত্যাকাণ্ড: স্ত্রীর ক্ষোভ ‘বিচার চাই না আর’

রানার সম্পাদক হত্যাকাণ্ড: স্ত্রীর ক্ষোভ ‘বিচার চাই না আর’

যশোর: ১৭ বছর পার হলেও বিচার হয়নি যশোরের সাহসী সাংবাদিক অকুতোভয় কলম সৈনিক দৈনিক রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুল হত্যার। প্রতিবছর এই দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করে যশোরের সাংবাদিকরা।

নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিনও ১৭ বছর অপেক্ষা করছেন মুকুলের প্রকৃত হত্যাকারীরা শনাক্ত হবে, হত্যাকারীদের বিচার হবে। কিন্তু তার ওই পথ দীর্ঘ হচ্ছে ক্রমশ। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, এখন আর মুকুল হত্যার বিচার চাই না। কার করবে বিচার? কী হবে বিচার করে?

১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে রানার সম্পাদক সাহসী সাংবাদিক আরএম সাইফুল আলম মুকুল শহর থেকে বেজপাড়ার নিজবাসভবনে যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। পরদিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আকতার শিরিন অপরিচিত ব্যক্তিদের আসামি করে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলালউদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। একপর্যায়ে আইনি জটিলতার কারণে মামলার বিচারিক কার্যক্রম থমকে পড়ে এবং চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি হাইকোর্ট থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ থেকে সাংবাদিক মুকুল হত্যামামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সিআইডির এএসপি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মওলা বক্স নতুন দুজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট জমা দেন।

২০০৬ সালের ১৫ জুন যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (তৃতীয়), অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে ২২ জনকে অভিযুক্ত করে সাংবাদিক মুকুল হত্যা মামলার চার্জ গঠন করা হয়। এ সময় হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামে আরেক আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০১০ সালে মামলার ২৫ জন সাক্ষির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর রফিকুল ইসলাম পিটু জানান, সাংবাদিক মুকুল হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। এই আসামি উচ্চআদালতে যাওয়ায় আবারও মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালত ফারাজী আজমল হোসেনের অংশ বাদ রেখে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণশেষে ফারাজী আজমল হোসেনের হাইকোর্টে করা অব্যাহতির আবেদনের নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আদেশ সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয় তার আইনজীবীকে।

দীর্ঘ পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও হাইকোর্টের কোনো আদেশ এখনো এ আদালতে এসে পৌঁছায়নি। এ আদেশ পাওয়া গেলে আসামিদের ৩৪২ ধারায় জবানবন্দি পরীক্ষার পর যুক্তিতর্ক শেষে দ্রুত রায় পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

হাফিজা আক্তার শিরিন আরও বলেছেন, ২০০৭ সালে মুকুল হত্যাকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছে তার ছোট ছেলে অঞ্জন। মুকুল মারা যাওয়ার পর তার দুই ছেলের মুখের দিকে চেয়ে বেঁচেছিলাম। এখন এক ছেলে নেই। আমি বাঁচবো কী নিয়ে!

তিনি যশোর ছেড়ে বর্তমানে খুলনায় বসবাস করেন। তিনি অসুস্থ থাকায় যশোরে আসতে পারেননি। রোববার মোবাইল ফোনে তিনি নিউজ বাংলাদেশকে ওই কথাগুলো বলেন।

এদিকে, শ্রদ্ধা, ভালবাসায় যশোরের সাংবাদিকরা নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করেছে অকুতোভয় সাহসী সাংবাদিক দৈনিক রানার সম্পাদক শহীদ সাংবাদিক আরএম সাইফুল আলম মুকুলের ১৭তম হত্যাবার্ষিকী।

যশোর প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, যশোর সংবাদপত্র পরিষদ, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, দৈনিক গ্রামের কাগজ, দৈনিক লোকসমাজ, দৈনিক স্পন্দন, দৈনিক নারীকণ্ঠসহ স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহ রোববার সকালে সাংবাদিক মুকুলের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন।

একইসঙ্গে ‘বন্ধু ফোরাম ৭১’র সদস্যরা মরহুমের কবরে দোয়াপাঠ ও মোনাজাত করেন। এরপর যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনের সভাপতিত্বে আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আলোচনা করেন ক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান তোতা, গ্রামের কাগজ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন, নূর ইসলাম, রিমন খান প্রমুখ।

এরপর শহীদ সাংবাদিক মুকুলের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করা হয়।

একইস্থানে সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর স্মরণসভার আয়োজন করে। সংগঠনের সহসভাপতি মোস্তফা রুহুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফকির শওকত, বিএফইউজে নেতা আনোয়রুল কবীর নান্টু, সাবেক সভাপতি মহিদুল ইসলাম মন্টু, সাবেক সেক্রেটারি আহসান কবীর, তৌহিদ জামান, এসএম সোহেল প্রমুখ।

সাংবাদিক নেতারা দীর্ঘ ১৭ বছরেও চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে সাহসী সাংবাদিক মুকুলসহ সকল সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের আহ্বান জানান।

নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়