‘কালা বাহিনী’ আতঙ্ক
মাদারীপুর: মাদারীপুর সদর, রাজৈর ও শিবচর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ‘কালা বাহিনী’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই আতঙ্কে তিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে গ্রামবাসী। নদী বেষ্টিত গ্রামগুলোতে ট্রলার থামিয়ে ‘কালা বাহিনী’ হানা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ এই আতঙ্ককে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।
জানা গেছে, কালা বাহিনী নামে একদল দুর্বৃত্ত কালো পোশাক ও কালো মুখোশ পড়ে বিভিন্ন গ্রামে প্রায়ই হানা দিচ্ছে। ডাকাতির আড়ালে তারা যুবতী মেয়ে ও গৃহবধূদের উপর নির্যাতন করছে বলে অনেকের অভিযোগ। তবে সুনির্দিষ্টভাবে এর কোনো সত্যতা মিলছে না। কিন্তু আতঙ্ক দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই ডাকাত আতঙ্কে গত কদিন ধরে সদর উপজেলার ধুরাইল, শিরখাড়া, শ্রীনদী, ঘুন্সী, রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর, শাখারপাড়, কবিরাজপুর, হোসেনপুর, হরিদাসদী, মহেন্দ্রদী ও শিবচর উপজেলার নিলখী, দত্তপাড়া, শিরুয়াইল, বহেরাতলা, বাঁশকান্দি, ভান্ডারীকান্দি, শিবচর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়রা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। এসব এলাকার মানুষ রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। রাত ৯টার পরই খালি হয়ে যাচ্ছে এইসব গ্রামের হাট-বাজারগুলো। এ সকল এলাকার নারীরা বেশি আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে। কথিত এই কালা বাহিনী নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন করে বলে ব্যাপকভাবে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ পরিবার ঘরের ভেতর রাত জেগে কাটাচ্ছে। কেউ বা আবার পালাক্রমে রাত জাগছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাস খানেক আগে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা, সদরপুর, নগরকান্দা, ফরিদপুর সদর এবং রাজবাড়ি জেলার নলিয়া জামালপুর, বহরপুর, বালিয়াকান্দির নবাবপুর ও মধুখালি উপজেলায় এ ধরণের আতঙ্ক দেখা গিয়েছিল। বিশেষ করে ভাঙ্গা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মধ্যে এই আতঙ্ক বেশি ছিল। এরপর থেকে মানুষের মুখে মুখে এই ‘কালা বাহিনী’ আতঙ্ক এখন মাদারীপুর জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
গত কয়েকদিন আগে সদর উপজেলার শিড়খাড়া এলাকা থেকে ডাকাতির সময় ৮ জন ডাকাতকে আটক করে পুলিশ ও স্থানীয়রা। তাছাড়া ঐ ঘটনার আগেই নিলখী বন্দর এলাকায় জনৈক বাবুলের বাড়িতে ডাকাতি এবং নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করে স্থানীয়রা। এ ধরণের খবর লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নিলখী ইউনিয়নের সোহরাব মোল্যা, কৃষক মোসলেম হাওলদার, কামালউদ্দিন, দত্তপাড়া ইউনিয়নের কিসমত বেপারী, গৃহবধু সীমা বেগম, শিউলি আক্তার, শিরুয়াইল ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন, এমদাদসহ একাধিক গ্রামবাসী বলেন, “কালা বাহিনীর ভয়ে আমরা আতংকের মধ্যে আছি। গ্রামের মেয়েরা বেশি আতংকের মধ্যে আছে। কালা বাহিনীর ডাকাতির পাশাপাশি মেয়ের উপর অত্যাচার করে। তাই আমরা রাত জেগে পাহারা দেই”। এ সময় তাদের কাছে কোথায় ডাকাতি হয়েছে ও কোন মেয়ে অত্যাচারের শিকার হয়েছে- জানতে চাওয়া হলে তারা নিদির্ষ্ট কোন উত্তর দিতে পারেনি। শিবচর থানা পুলিশ জানায়, এ ধরণের কোন ঘটনার অভিযোগ শিবচর থানায় এখনো আসেনি। ‘কালা বাহিনী’ আতঙ্ক পুরোটাই গুজব বলে জানিয়েছে উপজেলা পুলিশ প্রশাসন। তবে চুরি-ডাকাতি রোধে সাধারণ মানুষের সচেতন থাকার পাশাপাশি উপজেলায় সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে এই আতঙ্ক দুর করতে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার মিঞা বলেন, ‘কালাবাহিনী’ আতঙ্ক সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজ করছে শুনেছি। আমরা উপজেলার প্রত্যেকটি পুলিশ ফাঁড়িকে রাত্রিকালীন টহল বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি। সাধারণ মানুষের মাঝ থেকে ভীতি দূর করার জন্য আমরা জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করেছি গ্রামে গ্রামে। ‘কালাবাহিনী’ একটা গুজব। তবে চুরি-ডাকাতি রোধে সাধারণ মানুষকে আমরা সচেতন করছি এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনায় পুলিশকে দ্রুত জানানোর জন্য বলা হচ্ছে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, বিষয়টি শুনেছি, তবে আমরা এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি। পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে তাদের এই ভীতি দূর করা হবে।
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, এটা একটা গুজব, কিছুদিন আগে ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে এ ধরণের গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তারপরেও আমি বিষয়টি শুনে কমিউনিটি পুলিশিং জোরদার করেছি এবং পুলিশের টহল বাড়িয়ে দিয়েছি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম








