সাংবাদিকদের থানায় যেতে ওসির নিষেধাজ্ঞা!
ঝিনাইদহ: তথ্য নিতে সাংবাদিকদের থানায় যেতে নিষেধ করলেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার ওসি এমএ হাশেম খান। সাংবাদিকরা থানায় তথ্য নিতে গেলে পুলিশ অফিসাররা বিরক্ত হয় বলেও জানালেন তিনি। তথ্য অধিকার আইনানুসারে যেখানে সরকারিসহ সকল দপ্তরের তথ্য প্রদানে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেখানে হাশেম খান কোনো প্রকার তথ্য প্রদানে বাধ্য নন বলে জানালেন সাংবাদিকদের।
জানা যায়, শুক্রবার রাত্রীকালীন অভিযানে শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আট মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে থানা পুলিশ। এদের মধ্যে মাদক ব্যবসায়ী মালিপাড়া গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে আক্তার, কাজীপাড়া গ্রামের আজাদ, ফুল মিয়া, রয়েড়া বাজারের রহমান ও আরও চারজনসহ মোট আটজনকে আটক করা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে আদালতে প্রেরণ করা হয়নি।
পুলিশ আটকের ঘটনা ধামাপাচা দিচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে থানায় তথ্য নিতে যান। এসময় বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক কল্যাণ ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ভোরের কাগজের শৈলকুপা উপজেলা প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান সুমন, সকালের খবরের সাংবাদিক এইচএম ইমরান ও এশিয়ান টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সোহাগ আলীসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। ওসি উপস্থিত না থাকায় ডিউটি অফিসার তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সাংবাদিকরা ডিউটি অফিসারের রুমে ওসির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
দুপুর ২টার দিকে ওসি হাশেম খান থানায় ঢুকে ডিউটি অফিসারের রুমে সাংবাদিকদের দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে রাগত কণ্ঠে বলেন, আপনারা থানায় এসেছেন কেন? তথ্যের প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করতে পারতেন। সাংবাদিকরা থানায় এলে প্রশাসনিক কাজকর্মে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়।
ওসি বলেন, রাজনীতিবিদসহ নানান ধরনের লোকজন নিয়ে আমাদের চলতে হয় ও তাদের সুপারিশও রাখতে হয়। কাকে ধরব, ছাড়ব, কোন মামলায় চালান দিব সেটা নিতান্তই পুলিশের অভ্যন্তরীন ব্যাপার। কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করবেন অথবা থানায় এলেও সন্ধ্যার পরে আসবেন। সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করবেন, ভুলেও আমার অফিসারদের সাথে কথা বললেন না।
এসময় ডিউটি অফিসারের রুমে বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসার, রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
ওসি হাশেম খানের উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে শৈলকুপার সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট তথ্য দিতে অপারগতা কিসের? কেনই বা মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ অফিসারদের সাথে কথা বলা নিষেধ?
এদিকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন আপডেট তথ্যের জন্য তাৎক্ষণিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করা জরুরি হলেও ওসির নিষেধাজ্ঞার কারণে গণ্যমাধ্যম কর্মীদের সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং প্রচার প্রকাশে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এ নিয়ে সাংবাদিক ও সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় প্রেসক্লাব শৈলকুপার সভাপতি ও সম্পাদকসহ উপজেলায় কর্মরত সকল সাংবাদিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সাংবাদিকরা বিষয়টি ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারকে অভিযোগ আকারে জানালে তারা বিষয়টি আমলে নিয়ে বলেন, তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিকট থেকে সব ধরনের তথ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। থানার ওসি গণমাধ্যম কর্মীদের আন্তরিকভাবে তথ্য না দিলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। তাছাড়া প্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের নিকট থেকেও নিতে পারবেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/আরজে/এফই
নিউজবাংলাদেশ.কম








