রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়ায় রিজার্ভের উত্থান

ফাইল ছবি
দীর্ঘদিনের চাপ ও অনিশ্চয়তার পর ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। দেশের রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স ধারাবাহিক বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভের পরিমাণ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা অর্থনীতিতে স্বস্তির বাতাস বইয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৩০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) পদ্ধতিতে হিসাব করলে দেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫.৬ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরের আগস্টের শুরুতে বাংলাদেশের মোট রিজার্ভ ছিল ২৫.৮২ বিলিয়ন ডলার এবং নিট রিজার্ভ ছিল ২০.৩৯ বিলিয়ন ডলার। সেই সময় ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ নেমে গিয়েছিল মাত্র ১৪ বিলিয়ন ডলারে, যা ছিল গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের একটি, এবং যা দেশের আমদানি খাতে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছিল।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে দুই প্রধান খাত:
প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স): মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে অনৈতিক হুন্ডি কার্যক্রমের পরিমাণ কমে যাওয়ায়, আনুষ্ঠানিক পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
পণ্য রপ্তানি: তৈরি পোশাক (RMG) খাতের পাশাপাশি কৃষিপণ্য, চামড়া, হিমায়িত খাদ্য ও অন্যান্য শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানিতেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে তেল-চিনি-ডাল বিক্রি শুরু
বর্তমানে দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করছে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় ধরা হলে, এই রিজার্ভ দিয়ে দেশের আমদানি খরচ প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় পর্যন্ত নির্বিঘ্নে মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের ন্যূনতম রিজার্ভ ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান হওয়া প্রয়োজন। এ হিসাবে বাংলাদেশ বর্তমানে নিরাপদ পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে টাকার ওপর চাপ কমবে, ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থা ফিরে আসবে। তবে তারা সতর্ক করেছেন, শুধু রিজার্ভ বাড়ানোই যথেষ্ট নয়; টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করা, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ স্থিতিশীল রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার এখন অনেকটাই স্বস্তিতে আছে। ডলারের সরবরাহ বাড়ায় আমদানি খরচ মেটানো সহজ হচ্ছে এবং বাজারে অস্থিরতা কমেছে।
অর্থনীতির চাকা ঘুরতে থাকায় এবং বৈদেশিক আয় ইতিবাচক থাকায় আগামী কয়েক মাসে রিজার্ভ শিগগিরই ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘর স্পর্শ করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি